আজকাল তার টবের গাছগুলিতে ফোটে না, কতকগুলা যত্নের অভাবে মরিয়াই গিয়াছে। ঝিকে দিয়া মালা ও ফুল বাজার হইতে কিনিয়া আনাইল, তাহা দিয়া ফুলদানী সাজাই:ল, কিন্তু ফুলের তোড়ার জোগাড় করিতে পারিল না, তখন মায়ের হাতের তৈরী-করা পশমের ফুলগাছটি চিত্রিত একটি মাটির ছোট্ট টব হইতে তুলিয়া তাহা দিয়াই টেবিলের উপরিভাগ সাজাইয়া রাখিল।
প্রসন্নচিত্তে ঘুরিয়া ঘুরিয়া চারিদিক দেখিতে দেখিতে সহসা চন্দ্রকুমারের মেয়ের দিকে চোখ পড়িতেই চট্কা-ভাঙ্গা হইয়া উঠিয়া পরুষকণ্ঠে চেঁচাইয়া উঠিলেন:
“এর মানে? বলি, হ্যাঁগো! এর মানে? ওঁর চোখে আমায় খাটো করে দেওয়া, এই তো? এমন না হলে আর বিদুষী কন্যা! বেইমান! বেইমান! যার খাবে তারই কুচ্ছো গাইবে।”
ভয়ে সুনীতি শুকাইয়া উঠিল, এত পরিশ্রমে এত যত্নে সে সারা দিনে যে সমস্ত আয়োজন করিয়া তুলিয়াছে, হয়ত বা এখনই এক বিরাট লঙ্কাকাণ্ডে সে সমস্তই উৎসন্ন হইয়া যাইবে। শুষ্ক মুখে বিপন্নভাবে নীরবে তাকাইয়া রহিল, মনের প্রশ্ন মুখে ফুটাইতে ভরসা করিল না। কি বলিতে কি হইবে—কোন ঠিকানা আছে কি তার! চন্দ্রকুমার একটু পরেই ঈযৎ সুর নরম করিয়া আপনাআপনিই বলিলেন:
“এ রকম মূর্ত্তি কেন? বলবে কখন সাজ-সজ্জা করবো? এই তো?—তোমার মা বলতেন, ‘যে রাঁধে সে কি চুল বাঁধে না?’ শোননি কখন সে কথাটা? ভুদেববাবুর পারিবারিক প্রবন্ধ পড়েই দেখ না, কি বলেছেন বাংলার সেই মহান্ শিক্ষাগুরু? বলেননি কি, ‘একসঙ্গে যিনি বিবি ও বাঁদী হতে পারেন, লক্ষ্মী-চরিত্র তিনিই আয়ত্ত করেছেন।’ যাও যাও, ভাল করে চুল টুল বেঁধে, ভাল দেখে জামা