সুজাতা তার শান্তস্বভাবের জন্য মুখে বেশি প্রতিবাদ করিতে না পারিলেও মুখখানা নীচু করিয়া থাকে, দুটি শান্ত চোখে তার জল ভরিয়া উঠে, সুবিধা থাকিলে হঠাৎ উঠিয়া সরিয়াও যায়। বেশি কড়া মনে হইলে সুদর্শনাকে খুঁজিয়া বাহির করিয়া তাকে পরম স্নেহে দুহাতে জড়াইয়া ধরে, একটা ছল করিয়া বলে, “বেঁটে মানুষ আমার দ্বারা তো হবে না, আলমারির মাথা থেকে ঐ টুলটায় চড়ে দেখতো পাখা আছে কিনা”,—নয়তো বলে,—“সূর্যমুখী ফুলগুলি কত উচুতে ফুটেছে দেখ! পেড়ে আনতো, ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখি।”—অর্থাৎ এইরকম করিয়া সে নিন্দাকারীকে না হোক নিজের মনকে, বুঝাইতে চাহিত ‘যে যা’ বলিতে হয় বলুক, আমি ওদের কথা মানিনে, লম্বা হওয়ার সংসারে কত দরকার, কত যে ওরা কাজে লাগে।”
সুদর্শনার রং তার দিদির চাইতে কিছু ফর্সা, খুঁটিয়া দেখিলে নাকে চোখেও কিছু হয়ত শ্রেষ্ঠ হইতে পারে, কিন্তু তার বড় বড় কাল চোখের মধ্যে মাঝে মাঝে কালো মেঘের ভিতরকার বিদ্যুৎ ঝলক মারে, উন্নত নাসারন্ধ্র সঘনে স্ফুরিত হয়, কাল-বৈশাখীর ঝড়-ঝাপ্টাও কদাচিৎ উঠিয়া পড়িতে বাধে না। আগুনের একটা লকলকে শিখার মতই সে যেন দর্পিতা। এতটুকু অবহেলা বা উপহাস তার প্রাণে সয় না, অতি সহজেই সে ফাটিয়া পড়ে, বিশেষ অন্যায় দেখিলে।
অথচ এই বিপরীত-ধর্ম্মী বোন দুটির মধ্যে এতখানি মনের মিল প্রাণের সংযোগ কদাচিৎ দেখা যায়, অথবা দেখা যায় না।
সুদর্শনার বুদ্ধি তীক্ষ্ণ। ছোটবেলায় রুগ্ন ছিল বলিয়া বিদ্যাভ্যাসটা তার কিছু বিলম্বিত হইয়াছিল। কিন্তু দিদির কৃপায় নিরক্ষরা ছোট বোন দিদির অধীত বিদ্যার সারভাগ আয়ত্ত করিয়া লইয়াছিল। রামায়ণ-মহাভারতের, কামিনী রায়ের, মানকুমারীর অনেক কবিতাই