পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৩৬

করিয়া যেন আশ মিটিতে ছিল না, পুলকে গদগদ হইয়া সুজাতা তার গাল টিপিয়া দিয়া বলিয়া উঠিল, “কি সুন্দর যে দেখাচ্ছে তোকে”—

 “কই দেখি”—বলিয়া সুদর্শনা আর্সির সামনে ছুটিয়া গেল, এক লহমার দৃষ্টি বুলাইয়াই সে উগ্র তীব্রকণ্ঠে কহিয়া উঠিল, “সুন্দর কই! ছাই, ছাই! দিদি! তুমি মিথ্যে কথা বল্লে কেন?”

 সুজাতা কলস্বরে হাসিয়া উঠিল, “তুই একটি হনুমান! পছন্দ বলে কিছু নেই তোর, যাঃ।”

 দিদি যখন তাকে বড় কথা বলিয়াছে, অর্থাৎ ‘হনুমান’ তখন সেটাকে নেহাৎ মারাত্মক গালি দেওয়াই হইয়াছে, অতএব এর পর আর এ নিয়ে গণ্ডগোল করা চলেনা। অথচ মা বলিলে সে এক বিরাট ব্যাপার হইতে পারিত।

 এখন সুদর্শনার খাটো চুলে চিমটি কাটিয়া রিবন বাঁধা সুজাতার কাজের মত কাজ জুটিয়াছে—প্রত্যহ বিভিন্ন রং-এর বিভিন্ন ছবি। তবে টুপিটাকে বেড়াইতে বাহির হইবার সময় দু’বেলাই হাতে করিতে হয়। অবশ্য বেশীর ভাগ সুজাতাই করে, তারই গরজ, যেহেতু এটুকু চুল খুব বেশী ক্ষণ রিবনের দায়িত্ব বহন করিতে সমর্থ হয় না— পথের মধ্যেই খুলিয়া পড়ে। কত না হারাইত, যদি না পাহারা দিতে সঙ্গে থাকিত দিদি।

 এহেন সুদর্শনা দেবীর যদি একটু একটু সুরুচি বোধ জন্মিতে থাকে, কলিকাতার বড়ঘরের মেয়ে মিস নিগট্ এবং পরে শ্বশুরালয়ে মিস রেক্সের ছাত্রী, ঠাকুরবাড়ীর সভ্যতার সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচিতা নবীনা জননীর মধ্যে কতটা নিরাপত্তা বোধ কি করিয়া না জন্মিবে? দূর পশ্চিমে নাগরিক আবহাওয়ার বাহিরে বর্দ্ধিত হওয়া মেয়েটি কি শেষে একটি ধাঙ্গড় বা সং তৈরি হইবে নাকি?