মুখে মৃত্যুর কথা বলিলেও এমন কি খুব তীব্রভাবে মনে করিলেও বাঁচিয়া থাকার স্পৃহাই তাদের মধ্যে সমধিক প্রবল, অবচেতন মনের মধ্যে সে স্পৃহা যে কেমন করিয়া কোথায় লুকানো থাকে, সে খবর সে নিজেও তা আর জানিতে পারে না, তাই তো কোন অবস্থাতেই মানুষ আন্তরিকতার সঙ্গে যথার্থভাবে মৃত্যু কামনা করে না। আকস্মিক একটা ক্রোধ বা মোহের বশে,—মধ্যে মধ্যে দেখা যায় সে আত্মহত্যাও করিয়া বসে বটে, কিন্তু সে রকম ক’জনেই বা করে? আর করিলেও যারা করে তারাও প্রকৃতিস্থতার মধ্য দিয়া তাহা করিতে পারে না। সাময়িক উন্মত্ততার মধ্য দিয়াই এমন অমানুষিক কাজটা করিয়া বসে।
হ্যা, বাঁচিয়া থাকাতেই মানুষের সুখ! সে যে মৃত্যুর কথা বলে বা ভাবে সে শুধু জীবনের প্রতি তীব্র বিতৃষ্ণার বশে নয়,—বিড়ম্বিত জীবনের একান্ত অভিমানেরও ফলে নয়, এতদিন ধরিয়া যে অপ্রতিহত সৌভাগ্যের উচ্চ শিখরে সে সমাসীন ছিল, আজ তাহা হইতে বিচ্যুত হইয়া কোন অনির্দ্দেশ্য জীবনের জটিল জালে বিজড়িত হইবার একটা নিদারুণ আতঙ্ক-মিশ্র দুর্ভাবনা তার চিত্তকে আচ্ছন্ন করিয়া দেয়। সুদর্শনার ঠিক এই অবস্থাটাই ঘটিয়াছিল। দাদুহীন পৃথিবী যে তার পক্ষে একান্ত নূতন, এই নূতন অবস্থাটাকে সে ঘোর সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখিতেছিল, নতুবা মরণের জন্য তার মনে সত্যকার আগ্রহ জাগিয়া ওঠা সম্ভবপর মনে হয় না। এই ত তার সবেমাত্র কিশোর বয়স মাত্র, এ বয়সে অন্তর হইতে কখনও মৃত্যুর আহ্বান শোনা যায়?
সুদর্শনা তার দাদুকে যেমন করিয়া তার সর্বান্তঃকরণ দিয়া আঁকড়াইয়া ধরিয়াছিল, তেমন হয়ত আর কেহ পারে নাই। তার দিদি সুজাতাও তাঁকে দেবতার মতই ভক্তি করিত, তাঁর প্রতি অকৃত্রিম