পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৬২

 পরাণ যে মায়ের একমাত্র সন্তান বলিয়া মাতৃভক্তিতে খুবই তদ্‌গত ছিল তা’ বলিতে পারি না। বরং সংসারে দেখা যায় যে-সব ছেলে মায়ের বেশী আদুরে তারাই মায়ের প্রতি অনাসক্ত ও অশ্রদ্ধাকারী হয়! হয়ত হওয়া উচিত, হয়ত ইহাই মাতৃ-কর্ত্তব্যের অবহেলার প্রতিফল। যাই হোক, এ ক্ষেত্রে সেটা ঠিকই ফলিয়াছিল। মায়ের প্রতি আশৈশব আজ পর্য্যন্ত পরাণের অত্যাচারের সীমা ছিল না। এতটুকু ত্রুটি পরাণের মা ঘটিতে দিত না তাই রক্ষা, নহিলে তুচ্ছতম খুঁটিনাটি ধরিয়া টিকটিক খিটখিট সে করিয়াই আছে। আজ কিন্তু কোথা হইতে এতদিনকার প্রসুপ্ত মাতৃভক্তি সহসা উথলিয়া উঠিল, অবশ্য তার একটা বড় রকম অগ্রবর্ত্তী কারণও বর্ত্তমান ছিল। জয়দুর্গা দেখিতে এমন কিছু ভাল নয়, তার উপর আবার থাকোর কথামত “খাইয়া খাইয়া” সে দিনকের দিন সত্যসত্যই একটি ক্ষুদ্র হস্তিনীমূর্ত্তিতে রূপান্তরিত হইয়া উঠিতেছিল। গালের মাংসপিণ্ডের মধ্যে ক্ষুদ্র চক্ষু ক্ষুদ্রতর হইয়া ডুবিয়া যাইবার জোগাড় করিয়াছে। এদিকে মাথায় খাটো মানুষ, আর একটু মাংস লাগিলেই ভাঁটার মত গড়াইয়া দেওয়া চলিবে, মাঠে লইয়া গিয়া ফুটবল খেলার কাজেও লাগিতে পারে। এ কথা সে স্ত্রীকে জানাইয়া দিতে কিছুমাত্র সঙ্কোচ করে নাই এবং পরিবর্ত্তে তার থ্যাবড়া নাক এবং তাল-পত্রে প্রস্তুত সিপাহীর মত লম্বা চাঁচাছোলা পাকসিটে মূর্ত্তির বিরুদ্ধে অজস্র কুৎসা প্রচারিত হইতেও শুনিয়াছে। তিলুর মেয়ের চেহারা এদিকের নয়, তার ছিপছিপে গড়ন পেটন তেমন না হোক, চেহারায় একটা জৌলুষ আছে! তাহাকে বধূ করিতে মায়ের সঙ্কোচকে সে প্রশংসনীয় মনে করে নাই, আজ সুবিধা পাইয়া উচ্চকণ্ঠে চীৎকার করিয়া উঠিল, “তুই পোড়ারমুখীই ত যত নষ্টের গোড়া। ঐ রাক্ষুসীটার ভয়ে এমন মেয়েটাকে হাতছাড়া করলি!”