যাই থাক, মুখে সে দম্ভ ভরিয়া বলিত, “দূর দূর, ছেলে নিয়ে কি করবো, ছেলে হলে তার বাপের মতনই হবে। ধেনো গিলে গিলে নোংরা কথা, পচা খেউড় গেয়ে গেয়ে বেড়াবে। পোড়া কপাল, ঝাঁটা মার অমন ছেলের মুখে। যদি ভুলেও জন্মাতে আসে আমার কাছে, জন্মমাত্তর পা ধরে পাথরে আছড়াব, তা কিন্তু বলে দিচ্ছি।”
অলক্ষিত থাকিয়া সে কথা হয়ত বা জন্মসম্ভাবিত সন্তান শুনিয়া থাকিবে, এ পথে সে পা বাড়াইল না।
এদিকে পরাণের বখামি যত দিন দিন বাড়িয়া চলিতেছিল, জয়দুর্গার রসনা ততই তীব্রতর হইয়া উঠিতেছিল, তাহাদের কোন্দলের কোলাহলে প্রতিবেশীদের কান ও প্রাণ ঝালাপালা হইবার উপক্রম করিয়াছিল। নিতান্ত পার্শ্ববর্ত্তীরা উভয় পক্ষকেই শান্ত করিবার জন্য বিস্তর চেষ্টা করিয়া অবশেষে হার মানিয়া নিরস্ত হইয়াছে। বুঝাইয়া কিছু বলিতে গেলে পরাণ বলে, “হয়েছে কি এখুনি, ওকে খুন করবো, তবে না ঠাণ্ডা হবো।”
জয়দুর্গা গোঁজ খোঁপার সঙ্গে সমানভাবে মুখ গোঁজ করিয়া গজরাইতে থাকে, “আমিই কি ছাড়বো না কি? একসঙ্গে দুটো খুন করে হাসতে হাসতে ফাঁসিকাঠে গিয়ে চড়বো। ফাঁসি দেবে, দেবে; একবারই না দেবে। দু’বার ত আর দিতে পারবে না।”
আর এই অতি নির্ভীক ও সতেজ অভিব্যক্তিতে যে গোপন রহস্যের ইঙ্গিত নিহিত ছিল, সে কথা লইয়া ইতিপূর্ব্বে বহু আলোচনা ও আন্দোলন হইয়া গিয়াছে। তিলু কৈবর্ত্তর বিধবা মেয়ে আতুসীকে লইয়াই সে প্রসঙ্গ। কিন্তু জয়দুর্গার মুখর মুখের কুৎসা রটান ব্যতীত অন্য কোন স্পষ্ট প্রমাণ না পাইলে গ্রাম্যমুখ্যরা ত তার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন না।