পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু
৭৪

আছে তা’ বরং এই দুটি ঋতুর সঙ্গে; একটি গ্রীষ্ম, একটি বর্ষা। গ্রীষ্ম ঋতুটি যত কষ্টকরই হােক, যাদের ইলেকট্রিক-ফ্যানের হাওয়া খাওয়ার মত সৌভাগ্য আছে, তাদের কথা ছেড়ে দিলেও তালপাতার পাখাতেও কিছু-কিঞ্চিৎ কষ্ট লাঘব হতে পারে। ঘরের ফাটা-চটা মেঝেয় শুয়েও এক রকমে কেটে যায়। যত-কিছু দুর্দ্দশা এবং সেটা অত্যন্ত অকরুণ মূর্ত্তি ধরে নাকাল করে কলকাতার বর্ষায়। হ্যাঁ,— সবখানের থেকেও কলকাতার বর্ষাকেই আমার বেশী ভয়। অন্যত্র রাস্তায় এমন নদী সৃষ্টি হয় না। পথে অবশ্য কাদা হয়, পিছলও হয়ে থাকে কিন্তু কথায় কথায় এক-হাঁটু জল দাঁড়ায় না, আর বাড়ীর উঠোনের জলে রান্না ভাঁড়ার বৈঠকখানা—সব একাকার হয়ে যায় না। ট্রাম বাস মােটর অচল হয়ে লাখ লাখ লােককে জুতো-জামা শুদ্ধ নোংরা জলে সাঁতার কাটায় না। এই বসন্ত সন্ধ্যাতেও কলকাতার রীতিক্রমে কোন বাসন্তী পরিবেশ ছিল না, অতি সাধারণ সবদিনকার মতই সাঁজবেলা। পাশের বাড়ীর রান্নাঘরের উনান ধরানাের কেরােসিনের ঝাঁজালাে গন্ধযুক্ত ঘুঁটেগন্ধী বাসন্তী বায়ু মধ্যে মধ্যে প্রচুরতর ধোঁয়ার সঙ্গে আমার নাসারন্ধ্রে প্রবিষ্ট হচ্ছিল। তাদেরই উপরতলায় স্কুলের ফেরত মেয়ে দুটি একটি জীর্ণাবস্থ হার্ম্মোনিয়ম নিয়ে দুজনে দুই সুরে তারস্বরে সঙ্গীত সাধনা করছিলাে, শুনে শুনে একান্ত অভ্যস্ত না হলে কখনই ঐ বেসুরাে-বেতালার উচ্চৈঃস্বরের গান শুনতে শুনতে অ্যানাটোমী বা কেমিস্ট্রীর সূক্ষ্মতত্ত্ব বিশ্লেষণ করা সম্ভব হত না।

 রাস্তায় মােটর, মােটর-বাস, লরী, রিক্সার একঘেয়ে চলন—ঘণ্টার টিং টিং এবং ছােট বড় মাঝারি বয়সের পথচারীদের হল্লা ও ফেরিওয়ালাদের সুরে বেসুরে নানান জিনিসের ফিরিস্তি এতাে আছেই, ওসব কানে ঢুকলে যদি তাদের আমল দেওয়া যায়, তাহলে আর