পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৭
হেমলক

জানালো এবং আমিও সানন্দে সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে নেমে এলেম, তখন সর্ব্বপ্রথম যার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটলো, তাকে দেখে গত সন্ধ্যার দৃঢ়প্রত্যয় আমার শিথিল না হয়েই পারলো না। পরিণত যৌবনে এমন অটুট রূপ বাঙ্গালী-ঘরের মেয়েদের বেশী দেখিনি। নিখুঁত ভাস্কর্য্য-প্রতিমা, যেন একখানি সচলা দেবী-মূর্ত্তি! ইনিই দিব্যেন্দুর স্ত্রী। মুখখানি ঈষৎ ম্লান, পাতলা ঠোঁটের কোণায় কোণায় ক্ষীণ একটুখানি ক্লান্ত হাসি। তবুও তার সেই পরিম্লান মুখে দৃষ্টিপাত করলে একটা উচ্চাঙ্গের অনুভূতি স্বতঃই মনের ভিতর জেগে ওঠে। এ মেয়ে নাকি তার স্বামীর জীবনকে অসুস্থ করতে পারে? তবে হ্যাঁ, সেই যে চিঠিতে লিখেছিল, পুত্র-শোকাতুরার মানসিক বিপর্য্যয়ের কথা, সেইটেই হয়ত এদের অব্যাহত সুখের উজানে ক্ষণিকের ভাঁটার টান এনে দিয়েছে।

 ইলার গলার স্বরটি পর্য্যন্ত যেমনই মিষ্টি, তেমনি শান্ত। বললে, “কাল আপনি এলেন, আমার এমনি দুর্ভাগ্য আমি আপনাকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে আসতেও পারলাম না। আমায় ক্ষমা করুন।”

 ব্যস্ত হয়ে বল্লেম, “সে কি কথা! ক্ষমা কিসের? আপনার শরীর সুস্থ ছিল না, তা’তে কি হয়েছে? আমায় একান্ত বাইরের লোক বলে ভাববেন না; দেখাশোনা না থাকলেও আমরা সেই বরাবরের বাল্যবন্ধু দুজনে দুজনার ভাইয়ের মতই।”

 মনে হলো ইলার বিষন্ন-করুণ মুখখানি আমার এই কথায় ঈষৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো, সে যেন সেইক্ষণেই আমায় তাদের একজন আত্মীয় বলেই গ্রহণ করলে। না-জানি কি রকম লোকটা এলো, ভেবে হয়ত একটু ভয়ই পেয়েছিল সে।

 এরপর থেকে আস্তে আস্তে সে আমার ছোট বোনটির মতই হয়ে উঠলো, আমি যাকে বহুদিন পূর্ব্বেই হারিয়েছি।