একটা জিনিষ আমায় খুব বিস্মিত করেছিল, সেটা এই বাড়ীতে ইলেকট্রিকের প্রচুর বন্দোবস্ত থাকা সত্ত্বেও একটি রাত্রেও আলো না জ্বলা। প্রথম প্রথম ভেবেছি বিগড়ে গেছে, মেরামত হলেই জ্বলবে। ক্রমে এক হপ্তা কেটে যেতেও যখন কোন ব্যবস্থাই দেখলেম না তখন দিব্যেন্দুকে প্রশ্ন করে বসলেম, “তোমার পাওয়ার হাউসে হ’ল কি? সারা বাড়ীতে একশো-দেড়শো ইলেকট্রিক বাল্ব ঝুলছে, সাতডেলে ঝাড়, বিচিত্র ফানুস-ঢাকনী, ও-সব কি শুধু দেখবার জন্যে?”
দিব্যেন্দুর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল। একটা উদ্গত নিশ্বাস চেপে ফেলে ও উত্তর দিলে, “ভূতের উপদ্রব!”
“ভূতের?”
“তা ছাড়া আর কি বল্বো? খোকাটার মৃত্যুর আগের রাত থেকে তুমি আসবার আগের দিন পর্য্যন্ত হাজার বারেরও বেশী চেষ্টা করেও ইলেকট্রিক-ব্যবস্থা ঠিক রাখতে পারিনি। এর জন্যে বড় বড় এক্সপার্ট ইঞ্জিনীয়ার বার বার এনেছি, নিজের ত কথাই নেই। পাওয়ার-হাউসে ডবল তালা, গুর্খা সিপাই পাহারা সমস্ত করেছি। কি করে কি হয় কেউ জানে না, প্রতি রাত্রে যন্ত্র বিগড়ানো, ‘কনেকসান কাট’ হবেই। একটি দিনও বাদ পড়বে না, বিরক্ত হয়ে ছেড়ে দিয়েছি।”
কাণ্ডটি ভৌতিক বই কি! প্রকাণ্ড জমির দক্ষিণ-ধারে কতকগুলো আউট-হাউস দেখা যায়, বেশ বুঝতে পারা যায় যে, বাড়ীর ঐ অংশটুকুমাত্র পুরাকালের চিহ্ন স্বরূপ খাড়া আছে, অবশ্য নূতন রং-চং মেরামতির মধ্য দিয়ে হঠাৎ একটা কৌতুহল মনে জাগলো। বললাম, “চল তো একবার দেখে আসি।” দুজনেই উঠে দাঁড়ালাম, দিব্যেন্দু একটুখানি হেসে বল্লে, “কি মতলব? ভূতের রোজা, না ডিটেকটিভ?
উত্তর দিলেম, “স্রেফ কৌতূহল।”