পাতা:ক্রৌঞ্চ-মিথুনের মিলন-সেতু - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯
হেমলক

 লাল কাঁকর ফেলা দুরমুস করা উদ্যান-পথ, দুধারে রাঙা ইঁটের ঢেউ তােলানর পরে দুধারে সমানভাবে ছাঁটাই-করা বর্ডার গাছ। দুপাশের চৌকা ফ্লাওয়ার বেডে নানা জাতের ফুল গাছ। যথােপযুক্ত স্থানে লােহার থামের মাথায় লোহার তারের জালির উপর দিয়ে লতিয়ে দেওয়া অপূর্ব্ব সব লতাকুঞ্জ। সবুজ ভেলভেট-মােড়ার মত নরম ঘাসে-ঢাকা বিস্তীর্ণ ভূমিতে ঝোঁপের ভাবে তৈরী করা কেতকী এবং নানা বর্ণের ক্যানাজাতীয় ফুলের গাছ ঘেরা সুরচিত ক্রীড়াভূমি। সে সমস্ত অতিক্রম করে আমরা অবশেষে বাড়ীর শেষপ্রান্তে সেই পূর্ব্ব কথিত পাওয়ার-হাউসের সামনে উপস্থিত হলেম। বড় বড় দু-দুটো তালা সত্যই ফটকের মতন সুদৃঢ় নিরেট লােহার দরজায় ঝুলছে, তারও বাইরে লােহার কোলাপ্‌সিবিল্ গেট, তাতেও দুটো তালা। অবাক হয়ে চেয়ে থেকে অবশেষে প্রশ্ন করলেম, “কতদিন এই নতুন গেটটা হয়েছে, নতুনই তো দেখছি। এটা বেশী দিনের ত নয়।”

 দিব্যেন্দু উত্তর করলে, “নয়ই তাে। ডলি জন্মাবার পর এটা করিয়েছি। খােকার মৃত্যুর রাত্রে,—” একটুক্ষণ থেমে গিয়ে যেন জোর করেই এক নিশ্বাসে বলে গেল,—“জানাে, সে-রাত্রে, হঠাৎ সমস্ত বাড়ী গভীর অন্ধকারে ডুবে গেল! তার শেষ-মুহূর্ত্তে আমরা তার মুখে একফোঁটা ওষুধ, একটু জলবিন্দু দিতে পারিনি। তার শেষ চোখ-চাওয়া মুখ, জীবিত মূর্ত্তি দেখতে পাইনি।” দিব্যেন্দু ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললে। “সেই থেকে এই অন্ধকারের খেলা আরম্ভ হলাে, প্রায়ই হয়, তবে আমিও অন্য ব্যবস্থা করে কতকটা তৈরী হয়েছি, ডলির জন্ম-রাত্রেও ঠিক ঐ একই ব্যাপার! সবটা না হলেও কিছুটা অসুবিধে হলাে বৈকি। বিশেষতঃ ইলা ভীষণ ভয় পেতে লাগলাে, মূর্চ্ছার পর মূর্চ্ছা। আর অনবরত কান্না এই বলে যে,