পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৯৮
গল্পগুচ্ছ

দুজনের সম্মিলিত রচনা। আপনি অবজ্ঞা করে বলবেন বাঙালি মেয়েরা অগোছালো। একটু সময় দিন, কাল দেখলে মনে হবে শ্বেতদ্বীপের শ্বেতভূজার অপূর্ব কীর্তি, মেমসাহেবী সৃষ্টি।”

 অধ্যাপক কিছু কুণ্ঠিত হয়ে আমাকে বললেন, “আপনি কিছু মনে করবেন না— দিদি বড়ো বেশি কথা কচ্ছে। কিন্তু ওটা ওর স্বভাব নয় মোটে। এখানে অত্যন্ত নির্জন, তাই ও আমার মনের ফাঁক ভরে রেখে দেয় কথা কয়ে। সেটা ওর অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে। ও যখন চুপ করে থাকে ঘরটা ছম্‌ছম্ করতে থাকে, আমার মনটাও। ও নিজে জানে না সে কথা। আমার ভয় হয় পাছে বাইরের লোকে ওকে ভুল বোঝে।”

 বুড়োর গলা জড়িয়ে ধরে অচিরা বললে, “বুঝুক-না দাদু! অত্যন্ত অনিন্দনীয়া হতে চাই নে, সেটা অত্যন্ত আন্‌ইণ্টারেস্টিঙ্‌।”

 অধ্যাপক সগর্বে বলে উঠলেন, “আমার দিদি কিন্তু কথা বলতে জানে, অমন আর কাউকে দেখি নি।”

 “তুমিও আমার মতো কাউকে দেখ নি, আমিও কাউকে দেখি নি তোমার মতো।”

 আমি বললাম, “আচার্যদেব, আজ বিদায় নেবার পূর্বে আমাকে একটা কথা দিতে হবে।”

 “আচ্ছা বেশ।”

 “আপনি যতবার আমাকে আপনি বলেন, আমি মনে-মনে ততবার জিভ কাটি। আমাকে দয়া করে তুমি বলে যদি ডাকেন তা হলে মন সহজে সাড়া দেবে। আপনার নাতনিও সহকারিতা করবেন।”

 অচিরা দুই হাত নেড়ে বললে, “অসম্ভব, আরও কিছুদিন যাক। সর্বদা দেখাশানো হতে হতে বড়োলোকের তিলকলাঞ্ছন যখন ঘষা পয়সার মতো পালিশ করা হয়ে যাবে তখন সবই সম্ভব হবে। দাদুর কথা স্বতন্ত্র। আমি বরঞ্চ ওঁকে পড়িয়ে নিই। বলো তো দাদু, ‘তুমি কাল খেতে এসো। দিদি যদি মাছের ঝোলে নুন দিতে ভোলে, মুখ না বেঁকিয়ে বোলো, কী চমৎকার। বোলো, সবটা আমারই পাতে দেওয়া ভালো, অন্যরা এরকম রান্না তো প্রায়ই ভোগ করে থাকেন।’”

 অধ্যাপক সস্নেহে আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন, “ভাই, তুমি বুঝতে পারবে না আসলে এই মেয়েটি লাজুক, তাই যখন আলাপ করা কর্তব্য মনে করে তখন সংকোচ ঠেলে উঠতে গিয়ে কথা বেশি হয়ে পড়ে।”

 “দেখেছেন ডক্টর সেনগুপ্ত? দাদু আমাকে কী রকম মধুর করে শাসন করেন। অনায়াসে বলতে পারতেন, তুমি বড়ো মুখরা, তোমার বকুনি অসহ্য। আপনি কিন্তু আমাকে ডিফেন্‌ড্ করবেন। কী বলবেন বলুন তো।”

 “আপনার মুখের সামনে বলব না।”

 “বেশি কঠোর হবে?”

 “আপনি মনে-মনেই জানেন।”

 “থাক্ থাক্‌, তা হলে বলে কাজ নেই। বাড়ি যান।”

 আমি বললুম, “তার আগে সব কথাটা শেষ করে নিই। কাল আপনাদের ওখানে আমার নেমতন্নটা নামকর্তন অনুষ্ঠানের। কাল থেকে নবীনমাধব নামটা থেকে কাটা