ক্লাইসলার পাবার আশা আছে। তাকে নতুন করে তুলতে পারব আমার নিজের হাতের গুণে।!"
“কী হবে ক্লাইসলারের গাড়িতে।”
“বিয়ে করতে যাব না।”
“এমন ভদ্র কাজ তুমি করবে, এ সম্ভব নয়।”
“ধরেছ ঠিক। তা হলে প্রথমে তোমাকে জিজ্ঞাসা করি—শীলাকে দেখেছ—কুলদা মিত্তিরের মেয়ে?”
“দেখেছি তোমারই পাশে যখন-তখন যেখানে-সেখানে।”
“আমার পাশেই ও বুক ফুলিয়ে জায়গা করে নিয়েছে আরও পাঁচজনকে ঠেকিয়ে। ও যে প্রগতিশীলা। ভদ্রসম্প্রদায়ের পিলে চমকে যাবে এইটেতেই ওর আনন্দ”
“শুধু কি তাই, মেয়ে-সম্প্রদায়ের বুকে শেল বিঁধবে তাতেও আনন্দ কম নয়।”
“আমারও মনে ছিল ওই কথাটা, তোমার মুখে শোনালো ভালো। আচ্ছা মন খুলে বলো, ওই মেয়েটির সৌন্দর্য কি অন্যায় রকমের নয়, যাকে বলা যেতে পারে বিধাতার বাড়াবাড়ি।
“সুন্দরী মেয়ের বেলাতেই বিধাতাকে মান বুঝি?”
“নিন্দে করবার দরকার হলে যেমন করে হোক একটা প্রতিপক্ষ খাড়া করতে হয়। দুঃখের দিনে যখন অভিমান করবার তাগিদ পড়েছিল তখন রামপ্রসাদ মা’কে খাড়া করে বলেছিলেন, তোমাকে মা বলে আর ডাকব না। এতদিন ডেকে যা ফল হয়েছিল, না ডেকেও ফল তার চেয়ে বেশি হবে না— মাঝের থেকে নিন্দে করবার ঝাঁজটা ভক্ত মিটিয়ে নিলেন। আমিও নিন্দে করবার বেলায় বিধাতার নাম নিয়েছি।”
“নিন্দে কিসের।”
“বলছি। শীলাকে আমার গাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলাম ফুটবলের মাঠ থেকে খড়্খড়্ শব্দ করতে করতে, পিছনের পদাতিকদের নাসারন্ধ্রে ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে। এমন সময় পাকড়াশিগিন্নি— ওকে জান তো, লম্বা গজের অত্যুক্তিতেও ওকে চলনসই বলতে গেলে বিষম খেতে হয়— সে আসছিল কোথা থেকে তার নতুন একটা ফায়াট গাড়িতে। হাত তুলে আমাদের গাড়িটা থামিয়ে দিয়ে পথের মধ্যে খানিক ক্ষণ হাঁ-ভাই-ও-ভাই করে নিলে। আর ক্ষণে ক্ষণে আড়ে আড়ে তাকাতে লাগল আমার রঙ-চটে-যাওয়া গাড়ির হুড আর জরাজীর্ণ পাদানটার দিকে। তোমাদের ভগবান যদি সাম্যবাদী হতেন, তা হলে মেয়েদের চেহারায় এত বেশি উঁচুনিচু ঘটিয়ে রাস্তায় ঘাটে এ রকম মনের আগুন জ্বালিয়ে দিতেন না।”
“তাই বুঝি তুমি—”
“হাঁ, তাই ঠিক করেছি যত শিগ্গির পারি শীলাকে ক্রাইসলারের গাড়িতে চড়িয়ে পাকড়াশিগিন্নির নাকের সামনে দিয়ে শিঙা বাজিয়ে চলে যাব। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সত্যি করে বলো, তোমার মনে একটু খানি খোঁচা কি—”
“আমাকে এর মধ্যে টান কেন। বিধাতা আমার রূপ নিয়ে তো খুব বেশি বাড়াবাড়ি করেন নি। আর আমার গাড়িখানাও তোমার গাড়িখানার উপর টেক্কা দেবার যোগ্য নয়।”