রাখ তো খুঁজিয়া দিতে পারি।”
ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “আচ্ছা, রাখিব।”
কমলাদেবী বলিলেন, “তবে শোনো। আজ তুমি শিকার করিতে যাইতে পারিবে না। এই লও তোমার চাবি।”
ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “সে হয় না, এ কথা রাখিতে পারি না।”
কমলাদেবী বলিলেন, “চন্দ্রবংশে জন্মিয়া এই বুঝি তোমার আচরণ! একটা সামান্য প্রতিজ্ঞা রাখিতে পারো না?”
ইন্দ্রকুমার হাসিয়া বলিলেন, “আচ্ছা, তোমার কথাই রহিল। আজ আমি শিকারে যাইব না।”
কমলাদেবী। তোমাদের আর কিছু হারাইয়াছে? মনে করিয়া দেখো দেখি।
ইন্দ্রকুমার। কই, মনে পড়ে না তো।
কমলাদেবী। তোমাদের সাত-রাজার-ধন মানিক? তোমাদের সোনার চাঁদ?
ইন্দ্রকুমার মৃদু হাসিয়া ঘাড় নাড়িলেন। কমলাদেবী কহিলেন, “তবে এসো, দ্যাখো-সে।”
বলিয়া অস্ত্রশালার দ্বারে গিয়া দ্বার খুলিয়া দিলেন। কুমার দেখিলেন, রাজধর ঘরের মেঝেতে চুপ করিয়া বসিয়া আছেন; দেখিয়া হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন— “এ কী, রাজধর অস্ত্রশালায় যে!”
কমলাদেবী বলিলেন, “উনি আমাদের ব্রহ্মাস্ত্র।”
ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “তা বটে, উনি সকল অস্ত্রের চেয়ে তীক্ষ।”
রাজধর মনে-মনে বলিলেন, ‘তোমাদের জিহ্বার চেয়ে নয়।’ রাজধর ঘর হইতে বাহির হইয়া বাঁচিলেন।
তখন কমলাদেবী গম্ভীর হইয়া বলিলেন, “না কুমার, তুমি শিকার করিতে যাও। আমি তোমার সত্য ফিরাইয়া লইলাম।”
ইন্দ্রকুমার বলিলেন, “শিকার করিব? আচ্ছা।”
বলিয়া ধনুকে তীর যোজনা করিয়া অতি ধীরে কমলাদেবীর দিকে নিক্ষেপ করিলেন। তীর তাঁহার পায়ের কাছে পড়িয়া গেল; কুমার বলিলেন, “আমার লক্ষ্যভ্রষ্ট হইল।”
কমলাদেবী বলিলেন, “না, পরিহাস না। তুমি শিকারে যাও।”
ইন্দ্রকুমার কিছু বলিলেন না। ধনুর্বাণ ঘরের মধ্যে ফেলিয়া বাহির হইয়া গেলেন। যুবরাজকে বলিলেন, “দাদা, আজ শিকারের সুবিধা হইল না।”
চন্দ্রনারায়ণ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “বুঝিয়াছি।”
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
আজ পরীক্ষার দিন। রাজবাটীর বাহিরের মাঠে বিস্তর লোক জড়ো হইয়াছে। রাজার ছত্র ও সিংহাসন প্রভাতের আলোতে ঝকঝক্ করিতেছে। জায়গাটা পাহাড়ে, উঁচুনিচু— লোকে আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে, চারি দিকে যেন মানুষের মাথার ঢেউ উঠিয়াছে। ছেলেগুলো গাছের উপর চড়িরা বসিয়াছে। একটা ছেলে গাছের ডাল