পাতা:গল্পগুচ্ছ (চতুর্থ খণ্ড).pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুকুট
৯৯৩

গিয়াছিলাম— আমি কি কখনও ভীরুতা দেখাইয়াছি। আমি কি শত্রুসৈন্যকে ছিন্নভিন্ন করিয়া তোমার সাহায্যের জন্য আসি নাই। কী দেখিয়া তুমি বলিলে যে, তোমার পরম স্নেহের রাজধর ব্যতীত কেহ তোমাকে বিপদ হইতে উদ্ধার করিতে পারিত না!”

 যুবরাজ একান্ত ক্ষুব্ধ হইয়া বলিলেন, “ভাই, আমি নিজের বিপদের কথা বলিতেছি না”—

 কথা শেষ হইতে না হইতে অভিমানে ইন্দ্রকুমার ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন।

 ইশা খাঁ যুবরাজকে বলিলেন, “যুবরাজ, এ মকুট তোমার কাহাকেও দিবার অধিকার নাই। আমি সেনাপতি, এ মুকুট আমি যাহাকে দিব তাহারই হইবে।” বলিয়া ইশা খাঁ রাজধরের মাথা হইতে মুকুট তুলিয়া যুবরাজের মাথায় দিতে গেলেন।

 যুবরাজ সরিয়া গিয়া বলিলেন, “না, এ আমি গ্রহণ করিতে পারি না।”

 ইশা খাঁ বলিলেন, “তবে থাক্। এ মুকুট কেহ পাইবে না।”

 বলিয়া পদাঘাতে মুকুট কর্ণফুলি নদীর জলে ফেলিয়া দিলেন। বলিলেন, “রাজধর যুদ্ধের নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াছেন— রাজধর শাস্তির যোগ্য।”

দশম পরিচ্ছেদ

ইন্দ্রকুমার তাঁহার সমস্ত সৈন্য লইয়া আহতহৃদয়ে শিবির হইতে দূরে চলিয়া গেলেন। যুদ্ধ অবসান হইয়া গিয়াছে, ত্রিপুরার সৈন্য শিবির তুলিয়া দেশে ফিরিবার উপক্রম করিতেছে। এমন সময় সহসা এক ব্যাঘাত ঘটিল।

 ইশা খাঁ যখন মকুট কাড়িয়া লইলেন রাজধর মনে-মনে কহিলেন, ‘আমি না থাকিলে তোমরা কেমন করিয়া উদ্ধার পাও একবার দেখিব।’

 তাহার পরদিন রাজধর গোপনে আরাকানপতির শিবিরে এক পত্র পাঠাইয়া দিলেন। সেই পত্রে তিনি ত্রিপুরার সৈন্যের মধ্যে আত্মবিচ্ছেদের সংবাদ দিয়া আরাকানপতিকে যুদ্ধে আহ্বান করিলেন।

 ইন্দ্রকুমার যখন স্বতন্ত্র হইয়া সৈন্যসমেত স্বদেশাভিমূখে বহুদূর অগ্রসর হইয়াছেন এবং যুবরাজের সৈন্যেরা শিবির তুলিয়া গৃহের অভিমুখে যাত্রা করিতেছেন, তখন সহসা মগেরা পশ্চাৎ হইতে আক্রমণ করিল— রাজধর সৈন্য লইয়া কোথায় সরিয়া পড়িলেন তাঁহার উদ্দেশ পাওয়া গেল না।

 যুবরাজের হতাবশিষ্ট তিন সহস্র সৈন্য প্রায় তাহার চতুর্গুণ মগসৈন্য-কর্তৃক হঠাৎ বেষ্টিত হইল। ইশা খাঁ যুবরাজকে বলিলেন, “আজ আর পরিত্রাণ নাই। যদ্ধের ভার আমার উপর দিয়া তুমি পলায়ন করো।”

 যুবরাজ দৃঢ়স্বরে বলিলেন, “পলাইলেও তো একদিন মরিতে হইবে।” চারি দিকে চাহিয়া বলিলেন— “পলাইবই বা কোথা! এখানে মরিবার যেমন সুবিধা পলাইবার তেমন সুবিধা নাই। হে ঈশ্বর, সকলই তোমারই ইচ্ছা।”

 ইশা খাঁ বলিলেন, “তবে আইস, আজ সমারোহ করিয়া মরা যাক।”— বলিয়া প্রাচীরবৎ শত্রুসৈন্যের এক দুর্বল অংশ লক্ষ্য করিয়া সমস্ত সৈন্য বিদ্যুৎ-বেগে