বোম্ভোলানাথ ভোঁ হয়ে থাকেন। তাঁর কর্ম নয় সংসার চালানো। দেখো-না, সরকার বাহাদুর শয়তানির জোরে দুনিয়া জিতে নিয়েছে, খৃস্টানির জোরে নয়। কিন্তু ওরা খাঁটি, তাই রাজ্য রক্ষা করতে পেরেছে। যেদিন কথার খেলাপ করবে, সেদিন ঐ শয়তানেরই কাছে কানমলা খেয়ে মরবে।”
নন্দকিশোর আশ্চর্য হয়ে গেল।
মেয়েটি বললে, “বাবু, রাগ কোরো না। তোমার মধ্যে ঐ শয়তানের মন্তর আছে। তাই তোমারই হবে জিত। অনেক পুরুষকেই আমি ভুলিয়েছি, কিন্তু আমার উপরেও টেক্কা দিতে পারে এমন পুরুষ আজ দেখলাম। আমাকে তুমি ছেড়ো না বাবু, তা হলে তুমি ঠকবে।”
নন্দকিশোর হেসে বললে, “কী করতে হবে।”
“দেনার দায়ে আমার আইমার বাড়িঘর বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, তোমাকে সেই দেনা শোধ করে দিতে হবে।”
“কত টাকা দেনা তোমার।”
“সাত হাজার টাকা।”
নন্দকিশোরের চমক লাগল, ওর দাবির সাহস দেখে। বললে, “আচ্ছা, আমি দিয়ে দেব, কিন্তু তার পরে?”
“তার পরে আমি তোমার সঙ্গ কখনও ছাড়ব না।”
“কী করবে তুমি।”
“দেখব, যেন কেউ তোমায় ঠকাতে না পারে আমি ছাড়া।”
নন্দকিশোর হেসে বললেন, “আচ্ছা বেশ, রইল কথা, এই পরো আমার আংটি।”
কষ্টিপাথর আছে ওঁর মনে, তার উপরে দাগ পড়ল, একটা দামি ধাতুর। দেখতে পেলেন মেয়েটির ভিতর থেকে ঝক্ ঝক্ করছে ক্যারেক্টরের তেজ— বোঝা গেল ও নিজের দাম নিজে জানে, তাতে একটুমাত্র সংশয় নেই।
নন্দকিশোর অনায়াসে বললে ‘দেব টাকা’— দিলে সাত হাজার বুড়ি আইমাকে।
মেয়েটিকে ডাকত সবাই সোহিনী বলে। পশ্চিমী ছাঁদের সুকঠোর এবং সুন্দর তার চেহারা। কিন্তু চেহারায় মন টলাবে, নন্দকিশোর সে জাতের লোক ছিলেন না। যৌবনের হাটে মন নিয়ে জুয়ো খেলবার সময়ই ছিল না তাঁর।
নন্দকিশোর ওকে যে দশা থেকে নিয়ে এসেছিলেন সেটা খুব নির্মল নয়, এবং নিভৃত নয়। কিন্তু ঐ একরোখা একগুঁয়ে মানুষ সাংসারিক প্রয়োজন বা প্রথাগত বিচারকে গ্রাহ্য করতেন না। বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করত ‘বিয়ে করেছ কি।’ উত্তরে শুনত, বিয়েটা খুব বেশি মাত্রায় নয়, সহ্যমত। লোকে হাসত যখন দেখত, উনি স্ত্রীকে নিজের বিদ্যের ছাঁচে গড়ে তুলতে উঠে পড়ে লেগে গিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করত, “ও কি প্রোফেসারি করতে যাবে নাকি!”
নন্দ বলতেন, “না, ওকে নন্দকিশোরি করতে হবে, সেটা যে-সে মেয়ের কাজ নয়।“
বলত, “আমি অসবর্ণবিবাহ পছন্দ করি নে।”
“সে কী হে!”