নি? সেইজন্যেই কি তুমি আমাকে ওর বেশি কাছে আনাগোনা করতে বারণ করছ, পাছে চেনাশোনার ঘেঁষ লেগে পালিশ নষ্ট হয়ে যায়?”
“দেখ্ নীলা, আমি তোকে বলে দিচ্ছি তোর সঙ্গে ওর বিয়ে কিছুতেই হতে পারবে না।”
“তা হলে আমি যদি মোতিগড়ের রাজকুমারকে বিয়ে করি?”
“ইচ্ছা হয় তো করিস।”
“সুবিধে আছে, তার তিনটে বিয়ে, আমার দায় অনেকটা হালকা হবে, আর সে মদ খেয়ে ঢলাঢলি করে নাইটক্লাবে— তখন আমি অনেকটা ছুটি পাব।”
“আচ্ছা বেশ, সেই ভালো। রেবতীর সঙ্গে তোর বিয়ে হতে দেব না।”
“কেন, তোমার সার আইজাক নিউটনের বুদ্ধি আমি ঘুলিয়ে দেব মনে কর?”
“সে তর্ক থাক্, যা বললাম তা মনে রাখিস।”
“উনি নিজেই যদি হ্যাংলাপনা করেন?”
“তা হলে এ পাড়া তাকে ছাড়তে হবে— তোর অন্নে তাকে মানুষ করিস, তোর বাপের তহবিল থেকে এক কড়িও সে পাবে না।”
“সর্বনাশ! তা হলে নমস্কার সার আইজাক নিউটন!”
সেদিনকার পালা সংক্ষেপে এই পর্যন্ত।
৯
“চৌধুরীমশায়, আর সবই চলছে ভালো, কেবল আমার মেয়ের ভাবনার সুস্থির হতে পারছি নে। ও যে কোন্ দিকে তাক করতে শুরু করেছে বুঝতে পারছি নে।”
চৌধুরী বললেন, “আবার ওর দিকে তাক করছে কারা সেটাও একটা ভাববার কথা। হয়েছে কি, এরই মধ্যে রটে গেছে ল্যাবরেটরি রক্ষার জন্যে তোমার স্বামী অগাধ টাকা রেখে গেছে। মুখে মুখে তার অঙ্কটা বেড়েই চলেছে। এখন রাজত্ব আর রাজকন্যা নিয়ে বাজারে একটা জুয়োখেলার সৃষ্টি হয়েছে।”
“রাজকন্যাটি মাটির দরে বিকোবে তা জানি, কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে রাজস্ব সস্তায় বিকোবে না।”
“কিন্তু লোকের আমদানি শুরু হয়েছে। সেদিন হঠাৎ দেখি, আমাদেরই অধ্যাপক মজুমদার ওরই হাত ধরে বেরিয়ে এল সিনেমা থেকে। আমাকে দেখেই ঘাড় বেঁকিয়ে নিল। ছেলেটা ভালো ভালো বিষয়ে বক্তৃতা দিয়ে বেড়ায়, দেশের মঙ্গলের দিকে ওর বুলি খুব সহজে খেলে। কিন্তু সেদিন ওর বাঁকা ঘাড় দেখে স্বদেশের জন্যে ভাবনা হল।”
“চৌধুরীমশায়, আগল ভেঙেছে।”
“ভেঙেছে বই-কি। এখন এই গরিবকেই নিজের ঘটিবাটি সামলাতে হবে।”
“মজুমদার-পাড়ায় মড়ক লাগে লাগুক, আমার ভয় রেবতীকে নিয়ে।”
চৌধুরী বললেন, “আপাতত ভয় নেই। খুব ডুবে আছে। কাজ করছে চমৎকার।”