“হাঁ, পেয়েছি।”
“নিঃস্বার্থরা তোমাকে জানিয়েছেন যে তোমার স্বামীর দত্ত অংশে তোমার যে টাকা আছে সে তুমি যেমন খুশি ব্যবহার করতে পার?”
“হাঁ, জেনেছি।”
“আমার কানে এসেছে উইলের প্রোবেট নেবার জন্যে তোমরা প্রস্তুত হচ্ছ। কথাটা বোধ হয় সত্যি?”
“হাঁ, সত্যি। বঙ্কুবাবু আমার সোলিসিটর।”
“তিনি তোমাকে আরও কিছু আশা এবং মন্ত্রণা দিয়েছেন।”
নীলা চুপ করে রইল।
“তোমার বঙ্কুবাবুকে আমি সিধে করে দেব যদি আমার সীমানায় তিনি পা বাড়ান। আইনে না পারি বে-আইনে। ফেরবার সময় আমি পেশোয়ার হয়ে আসব। আমার ল্যাবরেটরি রইল দিনরাত্রি চারজন শিখ সিপাইয়ের পাহারায়। আর যাবার সময় এই তোমাকে দেখিয়ে যাচ্ছি— আমি পাঞ্জাবের মেয়ে।”
ব’লে নিজের কোমরবন্ধ থেকে ছুরি বের করে বললে, “এ ছুরি না চেনে আমার মেয়েকে, না চেনে আমার মেয়ের সোলিসিটরকে। এর স্মৃতি রইল তোমার জিম্মায়। ফিরে এসে যদি হিসেব নেবার সময় হয় তো হিসেব নেব।”
১১
ল্যাবরেটরির চার দিকে অনেকখানি জমি ফাঁকা আছে। কাঁপন বা শব্দ যাতে যথাসম্ভব কাজের মাঝখানে না পৌঁছয়। এই নিস্তব্ধতা কাজের অভিনিবেশে রেবতীকে সহায়তা করে। তাই ও প্রায়ই এখানে রাত্রে কাজ করতে আসে।
নীচের ঘড়িতে দুটো বাজল। মুহূর্তের জন্য রেবতী তার চিন্তার বিষয় ভাবছিল জানালার বাইরে আকাশের দিকে চোখ মেলে।
এমন সময়ে দেওয়ালে পড়ল ছায়া। চেয়ে দেখে ঘরের মধ্যে এসেছে নীলা। রাত-কাপড় পরা, পাতলা সিল্কের শেমিজ। ও চমকে চৌকি থেকে উঠে পড়তে যাচ্ছিল। নীলা এসে ওর কোলের উপর বসে গলা জড়িয়ে ধরল। রেবতীর সমস্ত শরীর থর্ থর্ করে কাঁপতে লাগল, বুকে উঠতে পড়তে লাগল প্রবলবেগে। গদ্গদ কণ্ঠে বলতে লাগল, “তুমি যাও, এ ঘর থেকে তুমি যাও!”
ও বললে, “কেন।”
রেবতী বললে, “আমি সহ্য করতে পারছি নে। কেন এলে তুমি এ ঘরে।”
নীলা ওকে আরও দৃঢ়বলে চেপে ধরে বললে, “কেন, আমাকে কি তুমি ভালোবাসো না।”
রেবতী বললে, “বাসি, বাসি, বাসি! কিন্তু এ ঘর থেকে তুমি যাও।”
হঠাৎ ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল পাঞ্জাবী প্রহরী। ভর্ৎসনার কণ্ঠে বললে, “মায়িজি, বহুত শরমকি বাৎ হ্যায়, আপ বাহার চলা যাইয়ে।”
রেবতী চেতনমনের অগোচরে ইলেকট্রিক ডাকঘড়িতে কখন্ চাপ দিয়েছিল।
পাঞ্জাবী রেবতীকে বললে, “বাবুজি, বেইমানি মৎ করো।”