রেবতী নীলাকে জোর করে ঠেলে দিয়ে চৌকি থেকে উঠে পড়ল। দরোয়ান ফের নীলাকে বললে, “আপ বাহার চলা যাইয়ে, নহি তো মনিবকো হুকুম তামিল করে গা।”
অর্থাৎ জোর করে অপমান করে বের করে দেব। বাইরে যেতে যেতে নীলা বললে, “শুনছেন সার আইজাক নিউটন?— কাল আমাদের বাড়িতে আপনার চারের নেমন্তন্ন, ঠিক চারটে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের সময়। শুনতে পাচ্ছেন না? অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন?”
ব’লে একবার তার দিকে ফিরে দাঁড়ালে।
বাষ্পার্দ্র কণ্ঠে উত্তর এল, “শুনেছি।”
রাত-কাপড়ের ভিতর থেকে নীলার নিখুঁত দেহের গঠন ভাস্করের মূর্তির মতো অপরূপ হয়ে ফুটে উঠল, রেবতী মুগ্ধ চোখে না দেখে থাকতে পারল না। নীলা চলে গেল। রেবতী টেবিলের উপর মুখ রেখে পড়ে রইল। এমন আশ্চর্য সৌন্দর্য সে কল্পনা করতে পারে না। একটা কোন্ বৈদ্যুত বর্ষণ প্রবেশ করেছে ওর শিরার মধ্যে, চকিত হয়ে বেড়াচ্ছে অগ্নিধারায়। হাতের মুঠো শক্ত করে রেবতী কেবলই নিজেকে বলাতে লাগল, কাল চায়ের নিমন্ত্রণে যাবে না। খুব শক্ত শপথ করবার চেষ্টা করতে চায়, মুখ দিয়ে বেরয় না। ব্লটিঙের উপর লিখল, ‘যাব না, যাব না, যাব না।’ হঠাৎ দেখলে তার টেবিলে একটা ঘন লাল রঙের রুমাল পড়ে আছে, কোণে নাম সেলাই করা ‘নীলা’। মুখের উপর চেপে ধরল রুমাল, গন্ধে মগজ উঠল ভরে, একটা নেশা সির্ সির্ করে ছড়িয়ে গেল সর্বাঙ্গে।
নীলা আবার ঘরের মধ্যে এল। বললে, “একটা কাজ আছে ভুলে গিয়েছিলাম।”
দরোয়ান রুখতে গেল। নীলা বললে, “ভয় নেই তোমার, চুরি করতে আসি নি। একটা কেবল সই চাই।— জাগানী ক্লাবের প্রেসিডেণ্ট্ করব তোমাকে, তোমার নাম আছে দেশ জুড়ে।”
অত্যন্ত সংকুচিত হয়ে রেবতী বললে, “ও ক্লাবের আমি তো কিছুই জানি নে।”
“কিছুই তো জানবার দরকার নেই। এইটুকু জানলেই হবে ব্রজেন্দ্রবাবু এই ক্লাবের পেট্রন।”
“আমি তো ব্রজেন্দ্রবাবুকে জানি নে।”
“এইটুকু জানলেই হবে মেট্রপলিটান ব্যাঙ্কের তিনি ডাইরেক্টর। লক্ষ্মী আমার, জাদু আমার, একটা সই বই তো নয়।”
ব’লে ডান হাত দিয়ে তার কাঁধ ঘিরে তার হাতটা ধরে বললে, “সই করো।”
সে স্বপ্নাবিষ্টের মতো সই করে দিলে।
কাগজটা নিয়ে নীলা যখন মুড়ছে দরোয়ান বললে, “এ কাগজ আমাকে দেখতে হবে।”
নীলা বললে, “এ তো তুমি বুঝতে পারবে না।”
দরোয়ান বললে, “দরকার নেই বোঝবার।”
ব’লে কাগজটা ছিনিয়ে নিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললে। বললে, “দলিল বানাতে হয় বাইরে গিয়ে বানিয়ো। এখানে নয়।”
রেবতী মনে মনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। দরোয়ান নীলাকে বললে, “মাজি, এখন