আমার সহ্য হয় না।”
এ-কথা মন্মথর মনে অনেকদিন উদয় হইয়াছে, কিন্তু কথাটা কঠোর হইবে বলিয়া এ-পর্যন্ত কখনো বলেন নাই। বিধু মনে করিতেন, স্বামী তাঁহার গূঢ় অভিপ্রায় ঠিক বুঝিতে পারেন নাই, কারণ স্বামীসম্প্রদায় স্ত্রীর মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে অপরিসীম মূর্খ। কিন্তু মন্মথ যে বসিয়া বসিয়া তাঁহার চাল ধরিতে পারিয়াছেন, হঠাৎ জানিতে পারিয়া বিধুর পক্ষে মর্মান্তিক হইয়া উঠিল।
মুখ লাল করিয়া বিধু কহিলেন, “ছেলেকে মাসির কাছে পাঠালেও গায়ে সয় না, এতবড় মানী লোকের ঘরে আছি সে তো পর্বে বুঝতে পারি নি।”
এমন সময় বিধবা জা প্রবেশ করিয়া কহিলেন, “মেজবউ, তোদের ধন্য। আজ সতেরো বৎসর হয়ে গেল তবু তোদের কথা ফুরালো না! রাত্রে কুলায় না, শেষকালে দিনেও দুইজনে মিলে ফিস্ফিস্! তোদের জিবের আগায় বিধাতা এত মধু দিনরাত্রি জোগান কোথা হতে আমি তাই ভাবি। রাগ কোরো না ঠাকুরপো, তোমাদের মধুরালাপে ব্যাঘাত করব না, একবার কেবল দু মিনিটের জন্য মেজবউয়ের কাছ হতে শেলাইয়ের প্যাটার্নটা দেখিয়ে নিতে এসেছি।”
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
সতীশ। জেঠাইমা!
জেঠাইমা। কী বাপ।
সতীশ। আজ ভাদুড়িসাহেবের ছেলেকে মা চা খাওয়াবেন, তুমি যেন সেখানে হঠাৎ গিয়ে পোড়ো না।
জেঠাইমা। আমার যাবার দরকার কী, সতীশ।
সতীশ। যদি যাও তো তোমার এ কাপড়ে চলবে না, তোমাকে—
জেঠাইমা। সতীশ, তোর কোন ভয় নেই, আমি এই ঘরেই থাকব, যতক্ষণ তোর বন্ধুর চা খাওয়া না হয়, আমি বার হব না।
সতীশ। জেঠাইমা, আমি মনে করছি, তোমার এই ঘরেই তাকে চা খাওয়াবার বন্দোবস্ত করব। এ বাড়িতে আমাদের যে ঠাসাঠাসি লোক——চা খাবার, ডিনার খাবার মতো ঘর একটাও খালি পাবার জো নেই। মার শোবার ঘরে সিন্দক-ফিন্দুক কত কী রয়েছে, সেখানে কাকেও নিয়ে যেতে লজ্জা করে।
জেঠাইমা। আমার এখানেও তো জিনিসপত্র—
সতীশ। ওগুলো আজকের মতো বার করে দিতে হবে। বিশেষত তোমার এই বঁটি-চুপড়ি-বারকোশগুলো কোথাও না লুকিয়ে রাখলে চলবে না।
জেঠাইমা। কেন বাবা, ওগুলোতে এত লজ্জা কিসের। তাদের বাড়িতে কি কুটনো কুটবার নিয়ম নেই।
সতীশ। তা জানি নে জেঠাইমা, কিন্তু চা খাবার ঘরে ওগুলো রাখা দস্তুর নয়। এ দেখলে নরেন ভাদুড়ি নিশ্চয় হাসবে, বাড়ি গিয়ে তার বোনদের কাছে গল্প করবে।
জেঠাইমা। শোনো একবার, ছেলের কথা শোনো। বঁটি-চুপড়ি তো চিরকাল ঘরেই থাকে। তা নিয়ে গল্প করতে তো শুনি নি।