পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কর্মফল
৫২৫

ওর জন্য—

ভৃত্যের প্রবেশ

 ভৃত্য। সাহেব-বাড়ি হতে এই কাপড় এয়েছে।

 মন্মথ। নিয়ে যা কাপড়, নিয়ে যা। এখনি নিয়ে যা।

বিধুর প্রতি

 দেখো, সতীশকে যদি আমি এ কাপড় পরতে দেখি তবে তাকে বাড়িতে থাকতে দেব না, মেসে পাঠিয়ে দেব, সেখানে সে আপন ইচ্ছামতো চলতে পারবে।

দ্রুত প্রস্থান

 শশধর। অবাক কাণ্ড!

 বিধু। (সরোদনে) রায়মশায়, তোমাকে কী বলব, আমার বেঁচে সুখ নেই। নিজের ছেলের উপর বাপের এমন ব্যবহার কেউ কোথাও দেখেছে?

 শশধর। আমার প্রতি ব্যবহারটাও তো ঠিক ভালো হল না। বোধ হয় মন্মথর হজমের গোল হয়েছে। আমার পরামর্শ শোনো, তুমি ওকে রোজ সেই একই ডালভাত খাইয়ো না। ও যতই বলুক-না কেন, মাঝে মাঝে মসলাওয়ালা রান্না না হলে মুখে রোচে না, হজমও হয় না। কিছুদিন ওকে ভালো করে খাওয়াও দেখি, তার পরে তুমি যা বলবে ও তাই শুনবে। এ-সম্বন্ধে তোমার দিদি তোমার চেয়ে ভালো বোঝেন।

শশধরের প্রস্থান। বিধুমুখীর কুন্দন

 বিধবা জা। (ঘরে প্রবেশ করিয়া, আত্মগত) কখনো কান্না, কখনো হাসি—কতরকম যে সোহাগ তার ঠিক নেই—বেশ আছে।

দীর্ঘনিশ্বাস

 ও মেজবউ, গোসাঘরে বসেছিস! ঠাকুরপোকে ডেকে দিই, মানভঞ্জনের পালা হয়ে যাক।

অষ্টম পরিচ্ছেদ

 নলিনী। সতীশ, আমি তোমাকে কেন ডেকে পাঠিয়েছি বলি, রাগ কোরো না।

 সতীশ। তুমি ডেকেছ ব’লে রাগ করব আমার মেজাজ কি এতই বদ।

 নলিনী। না, ও-সব কথা থাক্। সকল সময়েই নন্দীসাহেবের চেলাগিরি কোরো না। বলো দেখি আমার জন্মদিনে তুমি আমাকে অমন দামি জিনিস কেন দিলে।

 সতীশ। যাকে দিয়েছি তার তুলনায় জিনিসটার দাম এমনই কি বেশি।

 নলিনী। আবার ফের নন্দীর নকল!

 সতীশ। নন্দীর নকল সাধে করি? তার প্রতি যখন ব্যক্তিবিশেষের পক্ষপাত—

 নলিনী। তবে যাও, তোমার সঙ্গে আর আমি কথা কব না।

 সতীশ। আচ্ছা, মাপ করো, আমি চুপ করে শুনব।

 নলিনী। দেখো সতীশ, মিস্টার নন্দী আমাকে নির্বোধের মতো একটা দামি ব্রেসলেট পাঠিয়েছিলেন, তুমি অমনি নির্বুদ্ধিতার সুর চড়িয়ে তার চেয়ে দামি একটা নেকলেস পাঠাতে গেলে কেন।

 সতীশ। যে-অবস্থায় লোকের বিবেচনাশক্তি থাকে না সে-অবস্থাটা তোমার জানা