দেখো দেখি।
সতীশ। মুশকিল তো কিছুই দেখি নে।
শশধর। তবে হাতে কিছু আছে বুঝি! ফাঁস কর নি।
সতীশ। কিছু তো আছেই।
শশধর। কত?
সতীশ। আফিম কেনবার মতো।
বিধু। (কাঁদিয়া উঠিয়া) সতীশ, ও কী কথা তুই বলিস, আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি, আমাকে আর দগ্ধাস নে।
শশধর। ছি ছি, সতীশ। এমন কথা যদিবা কখনো মনেও আসে তবু কি মার সামনে উচ্চারণ করা যায়। বড়ো অন্যায় কথা।
সুকুমারীর প্রবেশ
বিধু। দিদি, সতীশকে রক্ষা করো। ও কোন্দিন কী করে বসে আমি তো ভয়ে বাঁচি নে। ও যা বলে শুনে আমার গা কাঁপে।
সুকুমারী। ও আবার কী বলে।
বিধু। বলে কিনা আফিম কিনে আনবে।
সুকুমারী। কী সর্বনাশ। সতীশ, আমার গা ছুঁয়ে বল, এমন কথা মনেও আনবি নে। চুপ করে রইলি যে? লক্ষী বাপ আমার! তোর মা-মাসীর কথা মনে করিস।
সতীশ। জেলে বসে মনে করার চেয়ে এ-সমস্ত হাস্যকর ব্যাপার জেলের বাইরে চুকিয়ে ফেলাই ভাল।
সুকুমারী। আমরা থাকতে তোকে জেলে কে নিয়ে যাবে।
সতীশ। পেয়াদা।
সুকুমারী। আচ্ছা, সে দেখব কতবড়ো পেয়াদা; ওগো, এই টাকাটা ফেলে দাও-না, ছেলেমানুষকে কেন কষ্ট দেওয়া।
শশধর। টাকা ফেলে দিতে পারি, কিন্তু মন্মথ আমার মাথায় ইঁট ফেলে না মারে।
সতীশ। মেসোমশায়, সে ইঁট তোমার মাথায় পৌঁছবে না, আমার ঘাড়ে পড়বে। একে এক্জামিনে ফেল করেছি, তার উপরে দেনা, এর উপরে জেলে যাবার এতবড়ো সুযোেগটা যদি মাটি হয়ে যায় তবে বাবা আমার সে অপরাধ মাপ করবেন না।
বিধু। সত্যি, দিদি। সতীশ মেশোর টাকা নিয়েছে শুনলে তিনি বোধ হয় ওকে বাড়ি হতে বার করে দেবেন।
সুকুমারী। তা দিন-না। আর কি কোথাও বাড়ি নেই নাকি। ও বিধু, সতীশকে তুই আমাকেই দিয়ে দে-না। আমার তো ছেলেপুলে নেই, আমি নাহয় ওকেই মানুষ করি। কী বল গো।
শশধর। সে তো ভালোই। কিন্তু, সতীশ যে বাঘের বাচ্ছা, ওকে টানতে গেলে তার মুখ থেকে প্রাণ বাঁচাননা দায় হবে।
সকুমারী। বাঘমশায় তো বাচ্ছাটিকে জেলের পেয়াদার হাতেই সমর্পণ করে দিয়েছেন, আমরা যদি তাকে বাঁচিয়ে নিয়ে যাই এখন তিনি কোনো কথা বলতে পারবেন না।
শশধর। বাঘিনী কী বলেন, বাচ্ছাই বা কী বলে।