পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৯৪
গল্পগুচ্ছ

শেষের রাত্রি

 “মাসি!”

 “ঘুমােও যতীন, রাত হল যে।”

 “হােক-না রাত, আমার দিন তাে বেশি নেই। আমি বলছিলাম, মণিকে তার বাপের বাড়ি—ভুলে যাচ্ছি, ওর বাপ এখন কোথায়—”

 “সীতারামপুরে।”

 “হাঁ, সীতারামপুরে। সেইখানে মণিকে পাঠিয়ে দাও, আরও কতদিন ও রােগীর সেবা করবে! ওর শরীর তাে তেমন শক্ত নয়।”

 “শােনো একবার! এই অবস্থায় তােমাকে ফেলে বউ বাপের বাড়ি যেতে চাইবেই বা কেন।”

 “ডাক্তারেরা কী বলেছে সে কথা কি সে—

 “তা সে নাই জানল—চোখে তাে দেখতে পাচ্ছে। সেদিন বাপের বাড়ি যাবার কথা যেমন একটু ইশারায় বলা অমনি বউ কেঁদে অস্থির।”


মাসির এই কথাটার মধ্যে সত্যের কিছু অপলাপ ছিল সে কথা বলা আবশ্যক। মণির সঙ্গে সেদিন তাঁর এই প্রসঙ্গে যে আলাপ হইয়াছিল সেটা নিম্নলিখিত-মতাে।

 “বউ, তােমার বাপের বাড়ি থেকে কিছু খবর এসেছে বুঝি? তােমার জাঠততাে ভাই অনাথকে দেখলাম যেন।”

 “হাঁ, মা বলে পাঠিয়েছেন, আসছে শুক্রবারে আমার ছােটো বােনের অন্নপ্রাশন। তাই ভাবছি—”

 “বেশ তাে বাছা, একগাছি সােনার হার পাঠিয়ে দাও, তােমার মা খুশি হবেন।”

 “ভাবছি আমি যাব। আমার ছােটো বােনকে তাে দেখি নি, দেখতে ইচ্ছে করে।”

 “সে কী কথা। যতীনকে একলা ফেলে যাবে! ডাক্তার কী বলেছে শুনেছ তাে?”

 “ডাক্তার তাে বলছিল, এখনাে তেমন বিশেষ—”

 “তা যাই বলুক, ওর এই দশা দেখে যাবে কী ক’রে।”

 “আমার তিন ভাইয়ের পরে এই একটি বােন, বড়ো আদরের মেয়ে—শুনেছি ধুম ক’রে অন্নপ্রাশন হবে—আমি না গেলে মা ভারি—”

 “তােমার মায়ের ভাব বাছা, আমি বুঝতে পারি নে। কিন্তু, যতীনের এই সময়ে তুমি যদি যাও তােমার বাবা রাগ করবেন, সে আমি ব’লে রাখছি।”

 “তা জানি। তােমাকে এক লাইন লিখে দিতে হবে মাসি, যে, কোনাে ভাবনার কথা নেই—আমি গেলে বিশেষ কোনাে—”

 “তুমি গেলে কোনাে ক্ষতিই নেই সে কি জানি নে। কিন্তু, তােমার বাপকে যদি লিখতেই হয়, আমার মনে যা আছে সব খুলেই লিখব।”

 “আচ্ছা বেশ—তুমি লিখাে না। আমি ওঁকে গিয়ে বললেই উনি—”

 “দেখাে বউ, অনেক সয়েছি—কিন্তু, এই নিয়ে যদি তুমি যতীনের কাছে যাও