বাতাস ক’রে তার পরে ধোবাকে তােমার কাপড় দিতে গেল।”
“আশ্চর্য! বােধ হয় আমি ঠিক সেই সময়ে স্বপ্ন দেখছিলুম, যেন মণি আমার ঘরে আসতে চাচ্ছে—দরজা অল্প একটু ফাঁক হয়েছে—ঠেলাঠেলি করছে, কিন্তু কিছুতেই সেইটুকুর বেশি আর খুলছে না। কিন্তু, মাসি, তােমরা একটু বাড়াবাড়ি করছ—ওকে দেখতে দাও যে আমি মরছি—নইলে মত্যুকে হঠাৎ সইতে পারবে না।”
“বাবা, তােমার পায়ের উপরে এই পশমের শালটা টেনে দিই—পায়ের তেলো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।”
“না মাসি, গায়ের উপর কিছু দিতে ভালাে লাগছে না।”
“জানিস যতীন? এই শালটা মণির তৈরি, এতদিন রাত জেগে জেগে সে তােমার জন্যে তৈরি করছিল। কাল শেষ করেছে।”
যতীন শালটা লইয়া দুই হাত দিয়া একটু নাড়াচাড়া করিল। মনে হইল, পশমের কোমলতা যেন মণির মনের জিনিস; সে যে যতীনকে মনে করিয়া রাত জাগিয়া এইটি বুনিয়াছে, তার মনের সেই প্রেমের ভাবনাটি ইহার সঙ্গে গাঁথা পড়িয়াছে। কেবল পশম দিয়া নহে, মণির কোমল আঙুলের স্পর্শ দিয়া ইহা বােনা। তাই মাসি যখন শালটা তাহার পায়ের উপর টানিয়া দিলেন তখন তাহার মনে হইল, মণিই রাত্রির পর রাত্রি জাগিয়া তাহার পদসেবা করিতেছে।
“কিন্তু মাসি, আমি তাে জানতুম মণি শেলাই করতে পারে না—সে শেলাই করতে ভালােই বাসে না।”
“মন দিলে শিখতে কতক্ষণ লাগে। তাকে দেখিয়ে দিতে হয়েছে—ওর মধ্যে অনেক ভুল শেলাইও আছে।”
“তা, ভুল থাকনা। ও তাে প্যারিস একজিবিশনে পাঠানাে হবে না—ভুল শেলাই দিয়ে আমার পা ঢাকা বেশ চলবে।”
শেলাইয়ে যে অনেক ভুল-ত্রুটি আছে সেই কথা মনে করিয়াই যতীনের আরও বেশি আনন্দ হইল। বেচারা মণি পারে না, জানে না, বারবার ভুল করিতেছে, তবু ধৈর্য ধরিয়া রাত্রির পর রাত্রি শেলাই করিয়া চলিয়াছে—এই কল্পনাটি তাহার কাছে বড়াে করুণ, বড়াে মধুর লাগিল। এই ভুলে-ভরা শালটাকে আবার সে একটু নাড়িয়াচাড়িয়া লইল।
“মাসি, ডাক্তার বুঝি নীচের ঘরে?”
“হাঁ যতীন, আজ রাত্রে থাকবেন।”
“কিন্তু, আমাকে যেন মিছামিছি ঘুমের ওষুধ দেওয়া না হয়। দেখেছ তাে ওতে আমার ঘুম হয় না, কেবল কষ্ট বাড়ে। আমাকে ভালাে ক’রে জেগে থাকতে দাও। জান মাসি? বৈশাখ-দ্বাদশীর রাত্রে আমাদের বিয়ে হয়েছিল—কাল সেই স্বাদশী আসছে—কাল সেইদিনকার রাত্রের সব তারা আকাশে জ্বালানাে হবে। মণির বােধ হয় মনে নেই—আমি তাকে সেই কথাটি আজ মনে করিয়ে দিতে চাই; কেবল তাকে তুমি দু মিনিটের জন্যে ডেকে দাও। চুপ করে রইলে কেন। বােধ হয় ডাক্তার তােমাদের বলেছে আমার শরীর দুর্বল, এখন যাতে আমার মনে কোনাে—কিন্তু, আমি তােমাকে