“মাসি, তুমি একবার ও ঘরটা দেখে এসো গে, আমি যেন—”
“না বাছা, কাউকে তাে দেখলুম না।”
“আমি কিন্তু স্পষ্ট যেন—”
“কিচ্ছু না, যতীন—ঐ যে ডাক্তারবাবু, এসেছেন।”
“দেখুন, আপনি ওঁর কাছে থাকলে উনি বড় বেশি কথা কন। কয়রাত্রি এমনি ক’রে তাে জেগেই কাটালেন। আপনি শুতে যান, আমার সেই লােকটি এখানে থাকবে।”
“না মাসি, না, তুমি যেতে পাবে না।”
“আচ্ছা বাছা, আমি নাহয় ঐ কোণটাতে গিয়ে বসছি।”
“না, না, তুমি আমার পাশেই বসে থাকো—আমি তােমার এ হাত কিছুতেই ছাড়ছি নে—শেষ পর্যন্ত না। আমি যে তােমারই হাতের মানুষ, তােমারই হাত থেকে ভগবান আমাকে নেবেন।”
“আচ্ছা বেশ, কিন্তু আপনি কথা কবেন না যতীনবাবু। সেই ওষুষটা খাওয়াবার সময় হল—”
“সময় হল? মিথ্যা কথা। সময় পার হয়ে গেছে—এখন ওষুধ খাওয়ানো কেবল ফাঁকি দিয়ে সান্ত্বনা করা। আমার তার কোনাে দরকার নেই। আমি মরতে ভয় করি নে। মাসি, যমের চিকিৎসা চলছে, তার উপরে আবার সব ডাক্তার জড়াে করেছ কেন—বিদায় করে দাও, সব বিদায় করে দাও। এখন আমার একমাত্র তুমি—আর আমার কাউকে দরকার নেই—কাউকে না—কোনাে মিথ্যাকেই না।”
“আপনার এই উত্তেজনা ভালাে হচ্ছে না।”
“তা হলে তােমরা যাও, আমাকে উত্তেজিত কোরাে না।—মাসি, ডাক্তার গেছে? আচ্ছা, তা হলে তুমি এই বিছানায় উঠে বােসাে—আমি তােমার কোলে মাথা দিয়ে একটু শুই।”
“আচ্ছা, শােও বাবা, লক্ষীটি, একটু ঘুমােও।”
“না মাসি, ঘুমােতে বােলাে না—ঘুমােতে ঘুমােতে হয়তাে আর ঘুম ভাঙবে না। এখনাে আর-একটু আমার জেগে থাকবার দরকার আছে।— তুমি শব্দ শুনতে পাচ্ছ না? ঐ যে আসছে! এখনই আসবে।”
৫
“বাবা যতীন, একটু চেয়ে দেখাে—ঐ যে এসেছে। একবারটি চাও।”
“কে এসেছে। স্বপ্ন?”
“স্বপ্ন নয় বাবা, মণি এসেছে—তােমার শ্বশুর এসেছেন।”
“তুমি কে।”
“চিনতে পারছ না বাবা, ঐ তাে তােমার মনি।”
“মণি, সেই দরজাটা কি সব খুলে গিয়েছে।”
“সব খুলেছে, বাপ আমার, সব খুলেছে।