তার বেশি আমি করতে পারব না।
মন্মথর প্রস্থান
শশধর। কী করা যায়। ছেলেটাকে তাে জেলে দেওয়া যায় না! অপরাধ মানুষের পক্ষে যত সর্বনেশেই হােক, জেলখানা তার চেয়ে ঢের বেশি।
দশম পরিচ্ছেদ
ভাদুড়িজায়া। শুনেছ? সতীশের বাপ হঠাৎ মারা গেছে।
মিস্টার ভাদুড়ি। হাঁ, সে তো শুনেছি।
জায়া। সে-যে সমস্ত সম্পত্তি হাসপাতালে দিয়ে গেছে, কেবল সতীশের মার জন্য জীবিতকাল পর্যন্ত ৭৫ টাকা মাসহারা বরাদ্দ করে গেছে। এখন কী করা যায়।
ভাদুড়ি। এত ভাবনা কেন তােমার।
জায়া। বেশ লােক যা হােক তুমি! তােমার মেয়ে যে সতীশকে ভালােবাসে, সেটা বুঝি তুমি দুই চক্ষু মেলে দেখতে পাও না? তুমি তাে ওদের বিবাহ দিতেও প্রস্তুত ছিলে। এখন উপায় কী করবে।
ভাদুড়ি। আমি তাে মন্মথর টাকার উপর বিশেষ নির্ভর করি নি।
জায়া। তবে কি ছেলেটির চেহারার উপরেই নির্ভর করে বসে ছিলে। অন্নবস্ত্রটা বুঝি অনাবশ্যক?
ভাদুড়ি। সম্পূর্ণ আবশ্যক, যিনি যাই বলুন, ওর চেয়ে আবশ্যক আর-কিছুই নেই। সতীশের একটি মেসো আছে, বােধহয় জান।
জায়া। মেসো তাে ঢের লােকেরই থাকে, তাতে শান্তি হয় না।
ভাদুড়ি। এই মেসোটি আমার মক্কেল—অগাধ টাকা—ছেলেপুলে কিছুই নেই—বয়সও নিতান্ত অল্প নয়। সে তাে সতীশকেই পােষ্যপুত্র নিতে চায়।
জায়া। মেসােটি তাে ভালাে। তা চট্পট্ নিক-না। তুমি একটু তাড়া দাওনা।
ভাদুড়ি। তাড়া আমাকে দিতে হবে না, তার ঘরের মধ্যেই তাড়া দেবার লােক আছে। সবই প্রায় ঠিকঠাক, এখন কেবল একটা আইনের খটকা উঠেছে—এক ছেলেকে পােষ্যপুত্র লওয়া যায় কি না—তা ছাড়া সতীশের আবার বয়স হয়ে গেছে।
জায়া। আইন তাে তােমাদেরই হাতে—তােমরা চোখ বুজে একটা বিধান দিয়ে দাও-না।
ভাদুড়ি। ব্যস্ত হােয়ো না—পােষ্যপত্র না নিলেও অন্য উপায় আছে।
জায়া। আমাকে বাঁচালে। আমি ভাবছিলেম, সম্বন্ধ ভাঙি কী করে। আবার, আমাদের নেলি যেরকম জেদালাে মেয়ে সে যে কী করে বসত বলা যায় না। কিন্তু তাই বলে গরিবের হাতে তাে মেয়ে দেওয়া যায় না। ঐ দেখাে, তােমার মেয়ে কেঁদে চোখ ফুলিয়েছে। কাল যখন খেতে বসেছিল এমন সময় সতীশের বাপ-মরার খবর পেল, অমনি তখনি উঠে চলে গেল।
ভাদুড়ি। কিন্তু, নেলি যে সতীশকে ভালােবাসে সে তাে দেখে মনে হয় না। ও তাে সতীশকে নাকের জলে চোখের জলে করে। আমি আরও মনে করতাম, নন্দীর উপরেই ওর বেশি টান।