জায়া। তােমার মেয়েটির ঐ স্বভাব—সে যাকে ভালােবাসে তাকেই জ্বালাতন করে। দেখােনা, বিড়ালছানাটাকে নিয়ে কী কাণ্ডটাই করে! কিন্তু, আশ্চর্য এই, তবু তাে ওকে কেউ ছাড়তে চায় না।
নলিনীর প্রবেশ
নলিনী। মা, একবার সতীশবাবুর বাড়ি যাবে না? তাঁর মা বােধহয় খুব কাতর হয়ে পড়েছেন।—বাবা, আমি একবার তাঁর কাছে যেতে চাই।
একাদশ পরিচ্ছেদ
সতীশ। মা, এখানে আমি যে কত সুখে আছি সে তো আমার কাপড়-চোপড় দেখেই বুঝতে পার। কিন্তু, মেলােমশায় যতক্ষণ না আমাকে পােষ্যপুত্র গ্রহণ করেন ততক্ষণ নিশ্চিন্ত হতে পারছি নে। তুমি যে মাসহারা পাও আমার তাে তাতে কোনাে সাহায্য হবে না। অনেক দিন হতে নেব-নেব করেও আমাকে পােষ্যপুত্র নিচ্ছেন না—বােধহয় ওঁদের মনে মনে সন্তানলাভের আশা এখনাে আছে।
বিধু। (হতাশভাবে) সে আশা সফল হয় বা, সতীশ।
সতীশ। অ্যাঁ! বলাে কী মা!
বিধু। লক্ষণ দেখে তাে তাই বােধ হয়।
সতীশ। লক্ষণ অমন অনেকসময় ভুলও তাে হয়।
বিধু। না, ভুল নয় সতীশ, এবার তাের ভাই হবে।
সতীশ। কী যে বল মা, তার ঠিক নেই—ভাই হবেই কে বললে! বােন হতে পারে না বুঝি!
বিধু। দিদির চেহারা যেরকম হয়ে গেছে নিশ্চয় তাঁর মেয়ে হবে না, ছেলেই হবে। তা ছাড়া ছেলেই হােক, মেয়েই হােক, আমাদের পক্ষে সমানই।
সতীশ। এত বয়সের প্রথম ছেলে, ইতিমধ্যে অনেক বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বিধু। সতীশ, তুই চাকরির চেষ্টা কর্।
সতীশ। অসম্ভব। পাস করতে পারি নি। তা ছাড়া চাকরি করবার অভ্যাস আমার একেবারে গেছে। কিন্তু, যাই বল মা, এ ভারি অন্যায়। আমি তাে এতদিনে বাবার সম্পত্তি পেতেম, তার থেকে বঞ্চিত হলেম, তার পরে যদি আবার—
বিধু। অন্যায় নয় তাে কী, সতীশ। এ দিকে তােকে ঘরে এনেছেন, ও দিকে আবার ডাক্তার ডাকিয়ে ওষুধও খাওয়া চলছে। নিজের বােনপাের সঙ্গে এ কী রকম ব্যবহার। শেষকালে দয়াল ডাক্তারের ওষুধ তাে খেটে গেল। অস্থির হােস নে, সতীশ। একমনে ভগবানকে ডাক; তাঁর কাছে কোনাে ডাক্তারই লাগে না। তিনি যদি—
সতীশ। আহা, তিনি যদি এখনাে—এখনাে সময় আছে। মা, এঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত, কিন্তু যেরকম অন্যায় হল সে ভাব রক্ষা করা শক্ত হয়ে উঠেছে। ঈশ্বরের কাছে এঁদের একটা দুর্ঘটনা না প্রার্থনা করে থাকতে পারছি নে—তিনি দয়া করে যেন—
বিধু। আহা তাই হােক, নইলে তাের উপায় কী হবে সতীশ, আমি তাই ভাবি। হে ভগবান, তুমি যেন—