দোষ হল, তব, যে কদিন এখানে আমাদের অন্ন খাচ্ছ দরকার-মতো দুটো কাজই নাহয় করে দিলে। এমন কি কেউ করে না। এতে কি অত্যন্ত অপমান বোধ হয়।
সতীশ। কিছু না, কিছু না, কী করতে হবে বলো, আমি এখনি করছি।
সুকুমারী। খোকার জন্য সাড়ে সাত গজ রেন্বো সিল্ক চাই—আর একটা সেলার সুট—
সতীশের প্রস্থানোদ্যম
শোনো, শোনো, ওর মাপটা নিয়ে যেয়ো, জুতো চাই।
সতীশ প্রস্থানোন্মুখ
অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন—সবগুলো ভালো করে শুনেই যাও। আজও বুঝি ভাদুড়িসাহেবের রুটি বিস্কুট খেতে যাবার জন্য প্রাণ ছট্ফট্ করছে। খোকার জন্যে স্ট্র-হ্যাট এনো—আর তার রুমালও এক ডজন চাই।
সতীশের প্রস্থান। তাহাকে পুনরায় ডাকিয়া
শোনো সতীশ, আর-একটা কথা আছে। শুনলাম, তোমার মেসোর কাছ হতে তুমি নূতন সুট কেনবার জন্য আমাকে না বলে টাকা চেয়ে নিয়েছ। যখন নিজের সামর্থ্য হবে তখন যত খুশি সাহেবিয়ানা কোরো, কিন্তু পরের পয়সায় ভাদুড়িসাহেবদের তাক লাগিয়ে দেবার জন্য মেসোকে ফতুর করে দিয়ো না। সে টাকাটা আমাকে ফেরত দিয়ো। আজকাল আমাদের বড়ো টানাটানির সময়।
সতীশ। আচ্ছা, এনে দিচ্ছি।
সুকুমারী। এখন তুমি দোকানে যাও, সেই টাকা দিয়ে কিনে বাকিটা ফেরত দিয়ো। একটা হিসাব রাখতে ভুলো না যেন।
সতীশের প্রস্থানোদ্যম
শোনো সতীশ—এই কটা জিনিস কিনতে আবার যেন আড়াই টাকা গাড়িভাড়া লাগিয়ে বোসো না। ঐজন্যে তোমাকে কিছু আনতে বলতে ভয় করে। দু পা হেঁটে চলতে হলেই অমনি তোমার মাথায় মাথায় ভাবনা পড়ে—পরুষমানুষ এত বাবু হলে তো চলে না। তোমার বাবা রোজ সকালে নিজে হেঁটে গিয়ে নতুন বাজার হতে কই মাছ কিনে আনতেন—মনে আছে তো? মুটেকেও তিনি এক পয়সা দেন নি।
সতীশ। তোমার উপদেশ মনে থাকবে—আমিও দেব না। আজ হতে তোমার এখানে মুটেভাড়া, বেহারার মাইনে, যত অল্প লাগে সে দিকে আমার সর্বদাই দৃষ্টি থাকবে।
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ
হরেন। দাদা, তুমি অনেকক্ষণ ধরে ও কী লিখছ, কাকে লিখছ বলোনা।
সতীশ। যা যা, তোর সে খবরে কাজ কী, তুই খেলা কর্গে যা।
হরেন। দেখি-না কী লিখছ—আমি আজকাল পড়তে পারি।
সতীশ। হরেন, তুই আমাকে বিরক্ত করিস নে বলছি—যা তুই।
হরেন। ভয়ে আকার ভা, ল, ভাল, বয়ে আকার বা, সয়ে আকার সা, ভালোবাসা। দাদা, কী ভালোবাসার কথা লিখছ বলো-না। তুমি কাঁচা পেয়ারা ভালোবাস বুঝি?