পাতা:গল্পগুচ্ছ (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করার সময় সমস্যা ছিল।

૧૪૦ গল্পগুচ্ছ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “মেয়ের মা ?” বললেন, “আমার কথা বোলো না। আমি তোমাকে জানি, আমার মেয়ের মনও, জানি, তার বেশি জানবার জন্যে নক্ষত্ৰলোকে ছোটবার শখ নেই আমার।” আমার মন উঠল বিদ্রোহী হয়ে । বললেম, এমনতরো অবাস্তব বাধা মানাই অন্যায়। কিন্তু, যা অবাস্তব তার গায়ে ঘা বসে না। তার সঙ্গে লড়াই করব কী দিয়ে। এ দিকে মেয়ের সম্বন্ধের কথা আসতে লাগল নানা দিক থেকে । গ্ৰহতারকার অসম্মতি নেই এমন প্রস্তাবও ছিল তার মধ্যে। মেয়ে জিদ করে বলে বসল, সে চিরকাল কুমারী থাকবে, বিদ্যার সাধনাতেই যাবে তার দিন । বাপ মানে বুঝলেন না, তাঁর মনে পড়ল লীলাবতীর কথা। মা বুঝলেন, গোপনে জল পড়তে লাগল তাঁর চোখ দিয়ে। অবশেষে একদিন মা আমার হাতে একখানি কাগজ দিয়ে বললেন, “সনেত্রার ঠিকুজি। এই দেখিয়ে তোমার জন্মপত্রী সংশোধন করিয়ে নিয়ে এসো। আমার মেয়ের অকারণ দুঃখ সইতে পারব না।” । পরে কী হল বলতে হবে না। ঠিকুজির অঙ্কজাল খে৭ - ৰুে উদ্ধার করে আনলেম । চোখের জল মাছতে মুছতে মা বললেন, “পাল্যক 釁" তার পরে গেছে একুশ বছর কেটে। •, ត្, 8 # হাওয়ার বেগ বাড়তে চলল, বটির বিরাম নেই। সনেরাকে । *আলোটা লাগছে চোখে, নিবিয়ে দিই।" নিবিয়ে দিলেম। বষ্টিধারার মধ্যে দিয়ে রাস্তার ল্যাম্পের ঝাপসা আভা এল অন্ধকার ঘরে। সোফার উপরে সনেত্রীকে বসালেম আমার পাশে। বললেম, “সনি, আমাকে তোমার যথার্থ •দোসর বলে মান তুমি ?” “এ আবার কী প্রশন হল তোমার। উত্তর দিতে হবে নাকি।” “তোমার গ্রহতারা যদি না মানে ?” “নিশ্চয় মানে, আমি বঝি জানি নে ?” “এতদিন তো একত্রে কাটল আমাদের, কোনো সংশয় কি কোনোদিন উঠেছে তোমার মনে ।” “অমন সব বাজে কথা জিজ্ঞাসা কর যদি রাগ করব।” “সনি, দুজনে মিলে দুঃখ পেয়েছি অনেকবার। আমাদের প্রথম ছেলেটি মারা গেছে আর্ট-মাসে। টাইফয়েডে আমি যখন মরণাপন্ন, বাবার হল মৃত্যু। শেষে দেখি উইল জাল করে দাদা নিয়েছেন সমস্ত সম্পত্তি। আজ চাকরিই আমার একমাত্র ভরসা। তোমার মায়ের স্নেহ ছিল আমার জীবনের ধ্রুবতারা। পজোর ছটিতে বাড়ি যাওয়ার পথে নৌকোডুবি হয়ে স্বামীর সঙ্গে মারা গেলেন মেঘনা নদীর গভে । দেখলেম, বিষয়বধিহীন অধ্যাপক ঋণ রেখে গেছেন মোটা অঙ্কের; সেই ঋণ স্বীকার করে নিলেম। কেমন করে জানব এই-সমস্ত বিপত্তি ঘটায় নি আমারই এস্ট্রগ্রহ? আগে থাকতে যদি জানতে আমাকে তো বিয়ে করতে না।”