সুশীলকে গিয়া মারিত। সুশীল ভারি রাগ করিয়া বলিত, “পড়াশুনো করে তোমার এই বুদ্ধি হচ্ছে? একরত্তি ছেলে হয়ে বুড়োমানুষের গায়ে হাত তোল?” অমনি চারি দিক হইতে লোকজন ছুটিয়া আসিয়া, কেহ কিল কেহ চড় কেহ গালি দিতে আরম্ভ করে।
তখন সুবল একান্তমনে প্রার্থনা করিতে লাগিল যে, “আহা, যদি আমি আমার ছেলে সুশীলের মতো বুড়ো হই এবং স্বাধীন হই, তাহা হইলে বাঁচিয়া যাই।”
সুশীলও প্রতিদিন জোড়হাত করিয়া বলে, “হে দেবতা, বাপের মতো আমাকে ছোটো করিয়া দাও, মনের সুখে খেলা করিয়া বেড়াই। বাবা যেরকম দুষ্টামি আরম্ভ করিয়াছেন, উঁহাকে আর আমি সামলাইতে পারি না, সর্বদা ভাবিয়া অস্থির হইলাম।”
তখন ইচ্ছাঠাকরুন আসিয়া বলিলেন, “কেমন, তোমাদের শখ মিটিয়াছে?”
তাঁহারা দুইজনেই গড় হইয়া প্রণাম করিয়া কহিলেন, “দোহাই ঠাকরন, মিটিয়াছে। এখন আমরা যে যাহা ছিলাম আমাদিগকে তাহাই করিয়া দাও।”
ইচ্ছাঠাকরুন বলিলেন, “আচ্ছা, কাল সকালে উঠিয়া তাহাই হইবে।”
পরদিন সকালে সুবল পূর্বের মতো বুড়া হইয়া এবং সুশীল ছেলে হইয়া জাগিয়া উঠিলেন। দুইজনেরই মনে হইল যে, স্বপ্ন হইতে জাগিয়াছি। সুবল গলা ভার করিয়া বলিলেন, “সুশীল, ব্যাকরণ মুখস্থ করবে না?”
সুশীল মাথা চুলকাইতে চুলকাইতে বলিল, “বাবা, আমার বই হারিয়ে গেছে।”
আশ্বিন ১৩০২