আরম্ভ করিলেন। গানবাজনা আর চলে না।
রাজা মধ্যাহে জমিদানি-কাজ দেখিতেন। একদিন সকাল-সকাল অন্তঃপুরে গিয়া দেখিলেন, রানী কী-একটা পড়িতেছেন। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও কী পড়িতেছ।”
রানী প্রথমটা একটু অপ্রতিভ হইয়া কহিলেন, “বিপিনবাবুর একটা গানের খাতা আনাইয়া দুটো-একটা গানের কথা মখস্থ করিয়া লইতেছি; হঠাৎ তােমার শখ মিটিয়া গিয়া আর তাে গান শনিবার জো নাই!” বহুপর্বে শখটাকে সমূলে বিনাশ করিবার জন্য রানী যে বহুবিধ চেষ্টা করিয়াছিলেন, সে কথা কেহ তাঁহাকে স্মরণ করাইয়া দিল না॥
পরদিন বিপিনকে রাজা বিদায় করিয়া দিলেন; কাল হইতে কী করিয়া কোথায় তাঁহার অনুমষ্টি জুটিবে সে সম্বন্ধে কোনাে বিবেচনা করিলেন না।
দুঃখ কেবল তাহাই নহে, ইতিমধ্যে বিপিন রাজার সহিত অকৃত্রিম অনুরাগে আবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিলেন; বেতনের চেয়ে রাজার প্রণয়টা তাঁহার কাছে অনেক বেশি দামি হইয়া উঠিয়াছিল। কিন্তু, কী অপরাধে যে হঠাৎ রাজার হদ্যতা হারাইলেন, অনেক ভাবিয়াও বিপিন তাহা ঠিক করিতে পারিলেন না। এবং দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া তাঁহার পুরাতন তম্বুরাটিতে গেলাপ পরাইয়া বন্ধুহীন বহৎ সংসারে বাহির হইয়া পড়িলেন; যাইবার সময় রাজভৃত্য পুটেকে তাঁহার শেষ সম্বল দুইটি টাকা পুরস্কার দিয়া গেলেন।
আষাঢ় ১৩০৭