পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
উদ্ধার
৪২৯

মধ্যাহ্নে স্নানের পূর্বে চুল খুলিবার সময় দেখিল, চিঠিখানি নাই। হঠাৎ সন্দেহ হইল, হয়তাে চিঠিখানি কখন বিছানায় খলিত হইয়া পড়িয়াছে এবং তাহা তাহার স্বামীর হস্তগত হইয়াছে। স্বামী সে পত্র-পাঠে ঈর্ষায় দগ্ধ হইতেছে মনে করিয়া গৌরী মনে মনে একপ্রকার জালাময় আনন্দ অনুভব করিল; কিন্তু তাহার শিরােভূষণ পত্রখানি পাষণ্ডহস্তপর্শে লাঞ্ছিত হইতেছে, এ কল্পনাও অহার সহ্য হইল না। দুতপদে স্বামীগৃহে গেল।

 দেখিল, স্বামী ভূতলে পড়িয়া গোঁ গোঁ করিতেছে, মুখ দিয়া ফেনা পড়িতেছে, চক্ষুতারকা কপালে উঠিয়াছে। দক্ষিণ বদ্ধমষ্টি হইতে পদ্মখানি ছাড়াইয়া লইয়া তাড়াতাড়ি ডাক্তার ডাকিয়া পাঠাইল।

 ডাক্তার আসিয়া কহিল, আপােস্পেক্সি—তখন রােগীর মৃত্যু হইয়াছে।

 সেইদিন মফস্বলে পরেশের একটি জরুরি মকদ্দমা ছিল। সন্ন্যাসীর এতদন পতন হইয়াছিল যে, তিনি সেই সংবাদ লইয়া গৌরীর সহিত সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত হইয়াছিলেন।

 সদ্যবিধবা গৌরী যেমন বাতায়ন হইতে গুদেবকে চোরের মতাে পুস্করিণীর তটে দেখিল, তৎক্ষণাৎ বজ্রচকিতের ন্যায় দৃষ্টি অবনত করিল। গুরু যে কোথা হইতে কোথায় নামিয়াছেন, তাহা যেন বিদ্যােলােকে সহসা এই মুহুর্তে তাহার হদয়ে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল।

 গুরু ডাকিলেন, “গৌরী।”

 গৌরী কহিল, “আসিতেছি, গুরুদেব।”

 মত্যুসংবাদ পাইয়া পরেশের বন্ধুগণ যখন সৎকারের জন্য উপস্থিত হইল, দেখিল, গৌরীর মৃতদেহ স্বামীর পাবে শয়ান। সে বিষ খাইয়া মরিয়াছে। আধুনিক কালে এই আশ্চর্য সহমরণের দৃষ্টান্তে সতীমাহাত্যে সকলে স্তম্ভিত হইয়া গেল।

 শ্রাবণ ১৩০৭