পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ফেল
৪৩৭

পাছে আরও ভালাে তাহাকে ফাঁকি দিয়া আরকাহারও ভাগ্যে জোটে।

 অবশেষে খবর পাওয়া গেল, রাওলপিণ্ডিতে এক প্রবাসী বাঙালির এক পরসুন্দরী মেয়ে আছে। কাছের সুন্দরীর চেয়ে দরের সুন্দরীকে বেশি লােভনীয় বলিয়া মনে হয়। নলিন মতিয়া উঠিল, খরচপত্র দিয়া কন্যাকে কলিকাতায় আনাননা হইল। কন্যটি সুন্দরী বটে। নলিন কহিল, “যিনি যাই করুন, ফস করিয়া রাওলপিণ্ডি ছাড়াইয়া যাইবেন এমন সাধ্য কাহারও নাই। অন্তত এ কথা কেহ বলিতে পারিবেন না যে, এ মেয়ে তাে আমরা পর্বেই দেখিয়াছিলাম, পছন্দ হয় নাই বলিয়া সব করি নাই।”

 কথাবার্তা তাে প্রায় একপ্রকার স্থির, পানপত্রের আয়ােজন হইতেছে, এমন সময় একদিন প্রাতে দেখা গেল, ননীগােপালের বাড়ি হইতে বিচিত্র থালার উপর বিবিধ উপঢৌকন লইয়া দাসীচাকরের দল সার বাঁধিয়া চলিয়াছে।

 নলিন কহিল, “দেখে এসাে তাে হে, ব্যাপারখানা কী।”

 খবর আসিল, নন্দর ভাবী বধুর জন্য পানপত্র যাইতেছে।

 নলিন তৎক্ষণাৎ গুড়গুড়ি টানা বন্ধ করিয়া সচকিত হইয়া উঠিয়া বসিল; বলি, “খবর নিতে হচ্ছে তাে।”

 তৎক্ষণাৎ গাড়ি ভাড়া করিয়া ছড়ছড়, শব্দে হতে দুটিল। বিপিন হাজরা ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “কলকাতার মেয়ে, কিন্তু খাসা মেয়ে।”

 নলিনের বুক দমিয়া গেল; কহিল, “বল কী হে!”

 হাজরা কেবলমাত্র কহিল, “খাসা মেয়ে।”

 নলিন বলিল, “এ তাে দেখতে হচ্ছে।”

 পারিষদ বলিল, “সে আর শক্তটা কী।” বলিয়া তর্জনী ও অষ্ঠে একটা কাল্পনিক টাকা বাজাইয়া দিল।

 সুযোেগ করিয়া নমিন মেয়ে দেখিল। যতই মনে হইল, এ মেয়ে নন্দর জন্য একেবারে স্থির হইয়া গেছে, ততই বােধ হইতে লাগিল, মেয়েটি রাওলপিণ্ডজার চেয়ে ভালাে দেখিতে। দ্বিধাপীড়িত হইয়া নলিন পারিষদকে জিজ্ঞাসা করিল, “কেমন ঠেকছে হে।”

 হজরা কহিল, “আয়ে, আমাদের চোখে তাে ভালােই ঠেকছে।”

 নলিন কহিল, “সে ভালাে কি এ ভালাে।” হাজরা বলিল, “এই ভালাে।”

 তখন নলিনের বােধ হইল, ইহার চোখের পলৰ তাহার চেয়ে আরও একট, ফেন ঘন; তাহার রঙটা ইহার চেয়ে একট, যেন বেশি ফ্যাকাসে, ইহার গোলে একট, যেন হলদে আভায় সােনা মিশাইয়াছে। ইহাকে তাে হাতছাড়া করা যায় না।

 নলিন বিমর্ষভাবে চিত্ত হইয়া গুড়গুড়ি টানিতে টনিতে কহি, “ওতে হাজরা, কী করা যায় বলাে তাে।”

 হজরা বলিল, “মহারাজ, শক্তটা কী।” বলিয়া পুনশ্চ অঙ্গুষ্ঠে তর্জনীরতে কাল্পনিক টাকা বাজাইয়া দিল।

 টাকাটা এখন সত্যই সশব্দে বাজিয়া উঠিল তখন বধ্যেচিত্ত কল্প হইতে বিলম্ব হইল না। কন্যার পিতা একটা অকারণ ছুতো করিয়া বরের পিতার সহিত