পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
শুভদৃষ্টি
৪৩৯

সম্মুখে রাখিলেন।

 কান্তি জল, খাইলে পর ব্রাহণ তাঁহার পরিচয় লইলেন। কান্তি পৰি দিয়া কহিলেন, “ঠাকুর, আপনার যদি কোনাে উপকার করিতে পারি তাে কৃতার্থ হই।”

 নবীন বাড়ুজ্জে কহিলেন, “বাবা, আমার আর কী উপকার করিবে। তবে সুধা বলিয়া আমার একটি কন্যা আছে, তাহার বয়স হইতে চলিল, তাহাকে একটি সৎপাত্রে দান করিতে পারিলেই সংসারের ঋণ হইতে মুক্তিলাভ করি। কাছে কোথাও ভালাে ছেলে দেখি না, দুরে সন্ধান করিবার মতাে সামর্থও নাই; ঘরে গােপীনাথের বিগ্রহ আছে, তাঁহাকে ফেলিয়া কোথাও যাই নাই।”

 কান্তি কহিলেন, “আপনি নৌকায় আমার সহিত সাক্ষাৎ করিলে পাত্র সম্বন্ধে আলােচনা করিব।”

 এ দিকে কান্তির প্রেরিত চরগণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা সুধার কথা যাহাকেই জিজ্ঞাসা করিল সকলেই একবাক্যে কহিল, এমন লক্ষীস্বভাবা কন্যা আর হয় না।

 পরদিন নবীন বােটে উপস্থিত হইলে কান্তি তাঁহাকে ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণাম করিলেন এবং জানাইলেন, তিনিই ব্রহ্মণের কন্যাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছুক আছেন। ব্রহ্মণ এই অভাবনীয় সৌভাগ্যে রুদ্ধকণ্ঠে কিছুক্ষণ কথাই কহিতে পারিলেন না। মনে করিলেন, কিছু-একটা ভ্রম হইয়াছে। কহিলেন, “আমার কন্যাকে তুমি বিবাহ করিবে?”

 কান্তি কহিলেন, “আপনার যদি সম্মতি থাকে, আমি প্রস্তুত আছি।”

 নবীন আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “সুধাকে?”—উত্তরে শনিলেন, “হাঁ।”

 নবীন শিরভাবে কহিলেন, “তা দেখাশােনা-"

 কান্তি, যেন দেখেন নাই, ভাণ করিয়া কহিলেন, “সেই একেবারে শুভদৃষ্টির সময়।”

 নবীন গদগদকণ্ঠে কহিলেন, “আমার সধা বড়ো সুশীলা মেয়ে, রাধাবাড়া বরকন্নার কাজে অদ্বিতীয়। তুমি যেমন না দেখিয়াই তাহাকে বিবাহ করিতে প্রত্যুত হইয়াছ তেমনি আশীর্বাদ করি, আমার সখা পতিব্রতা সতীলক্ষী হইয়া চিরকাল তােমার মঙ্গল করুক। কখনও মহতের জন্য তােমার পরিতাপের কারণ না ঘটুক।”

 কান্তি আর বিলম্ব করিতে চাহিলেন না, মাঘ মাসেই বিবাহ স্থির হইয়া গেল।

 পাড়ার মজুমদারদের পােন কোঠাবাড়িতে বিবাহের খান নিদিষ্ট হইয়াছে। বর হাতি চড়িয়া মশাল লাইয়া বাজনা বাজাইয়া যথাসময়ে আসিয়া উপস্থিত।

 শুভদষ্টির সময় বর কন্যার মুখের দিকে চাহিলেন। নতশির টোপর-পরা চন্দনচর্চিত সুধাকে ভালাে করিয়া যেন দেখিতে পাইলেন না। উদকেলিত হদয়ের আনন্দে চোখে যেন ধাঁধা লাগিল।

 বাসরঘরে পাড়ার সরকারি ঠানদিদি যখন বরকে দিয়া জোর করিয়া মেয়ের ঘােমটা খােলাইয়া দিলেন তখন কাতি হঠাৎ চমকিয়া উঠিলেন।

 এ তাে সেই মেয়ে নয়। হঠাৎ বুকের কাছ হইতে একটা কালাে বস্ত্র উঠিয়া তাহার মস্তকে যেন আঘাত করিল, মুহুর্তে বাসরঘরের সব প্রাণ যেন অন্ধকার হইয়া গেল এবং সেই অন্ধকারবনে নববধুর মুখখানিয়ে যেন কালিমালিপ্ত করিয়া দিল।

 কান্তি দ্বিতীয়বার বিবাহ করিবেন না বলিয়া মনে মনে প্রতিজ্ঞা