নষ্টনীড় 846: জতা পাইয়া অমলের আশা আরও বাড়িয়া উঠিল। এখন গলাবন্ধ চাই, রেশমের রামালে ফলকাটা পাড় সেলাই করিয়া দিতে হইবে, তাহার বাহিরের ঘরে বসিবার বড়ো কেদারায় তেলের দাগ নিবারণের জন্য একটা কাজ-করা আবরণ আবশ্যক। প্রত্যেক বারেই চারুলতা আপত্তি প্রকাশ করিয়া কলহ করে এবং প্রত্যেক বারেই বহয় যত্নে ও নেহে শৌখিন আমলের শখ মিটাইয়া দেয়। অমল মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করে, “বউঠান, কতদর হইল।” চারলেতা মিথ্যা করিয়া বলে, “কিছই হয় নি।” কখনও বলে, “সে আমার মনেই झिळ ना ।” কিন্তু অমল ছাড়িবার পাত্র নয়। প্রতিদিন স্মরণ করাইয়া দেয় এবং আবদার করে। নাছোড়বান্দা অমলের সেই-সকল উপদ্রব উদ্রেক করাইয়া দিবার জন্যই চার ঔদাসীন্য প্রকাশ করিয়া বিরোধের সন্টি করে এবং হঠাৎ একদিন তাহার প্রার্থনা পরেণ করিয়া দিয়া কৌতুক দেখে। ধনীর সংসারে চারকে আর কাহারও জন্য কিছই করিতে হয় না, কেবল অমল তাহাকে কাজ না করাইয়া ছাড়ে না। এই-সকল ছোটোখাটো শখের খাটানিতেই তাহার হৃদয়বৃত্তির চর্চা এবং চরিতার্থতা হইত। ভূপতির অন্তঃপরে যে একখণ্ড জমি পড়িয়া ছিল তাহাকে বাগান বলিলে অনেকটা অত্যুক্তি করা হয়। সেই বাগানের প্রধান বনপতি ছিল একটা বিলাতি আমড়াগাছ। এই ভূখণ্ডের উন্নতিসাধনের জন্য চার এবং অমলের মধ্যে একটা কমিটি বসিয়াছে। উভয়ে মিলিয়া কিছুদিন হইতে ছবি আকিয়া, ল্যান করিয়া, মহা উৎসাহে এই জমিটার উপরে একটা বাগানের কল্পনা ফলাও করিয়া তুলিয়াছে। অমল বলিল, “বউঠান, আমাদের এই বাগানে সে কালের রাজকন্যার মতো নিজের হাতে গাছে জল দিতে হবে।” * চার কহিল, "আর ঐ পশ্চিমের কোণটাতে একটা কুড়ে তৈরি করে নিতে হবে, হরিণের বাচ্ছা থাকবে ।" অমল কহিল, “আর একটি ছোটোখাটো ঝিলের মতো করতে হবে, তাতে হাঁস চরবে।” চার সে প্রস্তাবে উৎসাহিত হইয়া কহিল, “আর তাতে নীলপদ্ম দেব, আমার অনেক দিন থেকে নীলপদ্ম দেখবার সাধ আছে।” অমল কহিল, “সেই ঝিলের উপর একটি সাঁকো বেধে দেওয়া যাবে, আর ঘাটে একটি বেশ ছোটো ডিঙি থাকবে।” চার কহিল, “ঘাট অবশ্য সাদা মাবেলের হবে।” অমল পেনসিল কাগজ লইয়া, রল কাটিয়া, কম্পাস ধরিয়া, মহা আড়ম্বরে বাগানের একটা ম্যাপ অকিল। উভয়ে মিলিয়া দিনে দিনে কল্পনার সংশোধন পরিবতন করিতে করিতে বিশপাঁচশখানা নতন ম্যাপ অাঁকা হইল। ম্যাপ খাড়া হইলে কত খরচ হইতে পারে তাহার একটা এসটিমেট তৈরি হইতে লাগিল। প্রথমে সংকল্প ছিল-চার নিজের বরাদ মাসহায়া হইতে কমে ক্ৰমে বাগান
পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।