8á划 গল্পগুচ্ছ তৈরি করিয়া তুলিবে; ভূপতি তো বাড়িতে কোথায় কী হইতেছে তাহা চাহিয়া দেখে না; বাগান তৈরি হইলে তাহাকে সেখানে নিমন্ত্ৰণ করিয়া আশচষা করিয়া দিবে; সে মনে করিবে, আলাদিনের প্রদীপের সাহাষ্যে জাপান দেশ হইতে একটা আসত বাগান তুলিয়া আনা হইয়াছে। কিন্তু এসটিমেট যথেষ্ট কম করিয়া ধরিলেও চারীর সংগতিতে কুলায় না। অমল তখন পনরায় ম্যাপ পরিবতন করিতে বসিল। কহিল, “তা হলে বউঠান, ঐ ঝিলটা বাদ দেওয়া যাক ৷” চার কহিল, “না না, ঝিল বাদ দিলে কিছতেই চলবে না, ওতে আমার নীলপদ্ম থাকবে।” অমল কহিল, “তোমার হরিণের ঘরে টালির ছাদ নাই দিলে। ওটা অমনি একটা সাদাসিধে খোড়ো চাল করলেই হবে।" চার অত্যন্ত রাগ করিয়া কহিল, "তা হলে আমার ও ঘরে দরকার নেই— ও থাক।” মরিশস হইতে লবঙ্গ, কনট হইতে চন্দন, এবং সিংহল হইতে দারচিনির চারা আনাইবার প্রস্তাব ছিল, অমল তাহার পরিবতে মানিকতলা হইতে সাধারণ দিশি ও বিলাতি গাছের নাম করিতেই চার মুখ ভার করিয়া বসিল; কহিল “তা হলে অামার বাগানে কাজ নেই।” এসটিমেট কমাইবার এরপে প্রথা নয়। এসটিমেটের সঙ্গে সঙ্গে কল্পনাকে খব করা চারীর পক্ষে অসাধ্য, এবং অমল মুখে যাহাই বলকে, মনে মনে তাহারও সেটা রুচিকর নয়। অমল কহিল, “তবে বউঠান, তুমি দাদার কাছে বাগানের কথাটা পাড়ো; তিনি নিশ্চয় টাকা দেবেন।” চার কহিল, "না, তাঁকে বললে মজা কী হল। আমরা দুজনে বাগান তৈরি করে তুলব। তিনি তো সাহেব-বাড়িতে ফরমাস দিয়ে ইডেন গাডেন বানিয়ে দিতে পারেন-- তা হলে আমাদের পল্যানের কী হবে।” আমড়াগাছের ছায়ায় বসিয়া চার এবং অমল অসাধ্য সংকল্পের কল্পনাসখ বিস্তার করিতেছিল। চারীর ভাজ মন্দা দোতলা হইতে ডাকিয়া কহিল, "এত বেলায় বাগানে তোরা কী করছিস।” চার কহিল, “পাকা আমড়া খাঁজছি।” লখো মন্দা কহিল, “পাস যদি আমার জন্যে আনিস।” চার হাসিল, অমল হাসিল। তাহাদের সমস্ত সংকল্পগুলির প্রধান সখে এবং গৌরব এই ছিল যে, সেগুলি তাহাদের দুজনের মধ্যেই আবদ্ধ। মন্দার আর যা-কিছর গণে থাক, কল্পনা ছিল না; সে এ-সকল প্রস্তাবের রস গ্রহণ করিবে কী করিয়া। সে এই দুই সভোর সকলপ্রকার কমিটি হইতে একেবারে বাজত। অসাধ্য বাগানের এসটিমেটও কমিল না, কল্পনাও কোনো অংশে হার মানিতে চাহিল না। সুতরাং আমড়াতলার কমিটি এইভাবেই কিছুদিন চলিল। বাগানের যেখানে ঝিল হইবে, যেখানে হরিণের ঘর হইবে, যেখানে পাথরের বেদি হইবে, অমল সেখানে চিহ্ন কাটিয়া রাখিল ।
পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।