পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ Obf গল্পগুচ্ছ আমার এই ভাইটিকে তোর পছন্দ হইয়াছে ?” কুড়ানি মাথা হেলাইয়া কহিল, “হাঁ।” সে আবার মাথা হেলাইয়া কহিল, “হাঁ।” পটল এবং হরকুমারবাব হাসিয়া উঠিলেন। কুড়ানি কৌতুকের মম না বঝিয়া তাঁহাদের অনুকরণে মুখখানি হাসিতে ভরিয়া চাহিয়া রহিল। যতীন লাল হইয়া উঠিয়া ব্যস্ত হইয়া কহিল, "আঃ, পটল, তুমি বাড়াবাড়ি করিতেছ— ভারি অন্যায়। হরকুমারবাব, আপনি পটলকে বড়ো বেশি প্রশ্রয় দিয়া থাকেন।” হরকুমার কহিলেন, “নহিলে আমিও যে উহার কাছে প্রশ্রয় প্রত্যাশা করিতে পারি না। কিন্তু, যতীন, কুড়ানিকে তুমি জান না বলিয়াই অত ব্যস্ত হইতেছ। তুমি লজ্জা করিয়া কুড়ানিকে সমৃদ্ধ লজ্জা করিতে শিখাইবে দেখিতেছি। উহাকে জ্ঞানবক্ষের ফল তুমি খাওয়াইয়ো না। সকলে উহাকে লইয়া কৌতুক করিয়াছে—তুমি যদি মাঝের থেকে গাভীয দেখাও তবে সেটা উহার পক্ষে একটা অসংগত ব্যাপার হইবে।” পটল ( ঐজন্যই তো যতীনের সঙ্গে আমার কোনোকালেই বনিল না, ছেলেবেলা থেকে কেবলই ঝগড়া চলিতেছে- ও বড়ো গম্ভীর। হরকুমার। ঝগড়া করাটা বুঝি এমনি করিয়া একেবারে অভ্যাস হইয়া গেছে— ভাই সরিয়া পড়িয়াছেন, এখন— পটল। ফের মিথ্যা কথা! তোমার সঙ্গে ঝগড়া করিয়া সাখ নাই— আমি চেণ্টাও कर्गद्र ना । হরকুমার। আমি গোড়াতেই হার মানিয়া যাই। পটল। বড়ো কমাই কর। গোড়ায় হার না মানিয়া শেষে হার মানিলে কত খুশি হইতাম । রাত্রে শোবার ঘরের জানলা-দরজা খলিয়া দিয়া যতীন অনেক কথা ভাবিল। ষে মেয়ে আপনার বাপ-মাকে না খাইতে পাইয়া মরিতে দেখিয়াছে তাহার জীবনের উপর কী ভীষণ ছায়া পড়িয়াছে। এই নিদারণে ব্যাপারে সে কতবড়ো হইয়া উঠিয়াছে— তাহাকে লইয়া কি কৌতুক করা যায়। বিধাতা দয়া করিয়া তাহার বন্ধিবৃত্তির উপরে একটা আবরণ ফেলিয়া দিয়াছেন—এই আবরণ যদি উঠিয়া যায় তবে অদস্টের রন্দ্রলীলার কী ভীষণ চিহ্ন প্রকাশ হইয়া পড়ে। আজ মধ্যাহে গাছের ফাঁক দিয়া যতীন যখন ফালানের আকাশ দেখিতেছিল, দর হইতে কাঁঠালমকৃলের গন্ধ মাদতর হইয়া তাহার প্রাণকে আবিষ্ট করিয়া ধরিতেছিল, তখন তাহার মনটা মাধয্যের কুহেলিকায় সমস্ত জগৎটাকে আচ্ছন্ন করিয়া দেখিয়াছিল ; ঐ বধিহীন বালিকা তাহার হরিণের মতো চোখদুটি লইয়া সেই সোনালি কুহেলিকা অপসারিত করিয়া দিয়াছে ; ফাগানের এই কজন-গঞ্জেন-মমরের পশ্চাতে যে সংসার ক্ষুধাতৃষ্ণাতুর দুঃখকঠিন দেহ লইয়া বিরাট মতিতে দাঁড়াইয়া আছে, উদঘাটিত যবনিকার শিল্পমাধায্যের অন্তরালে সে দেখা দিল। পরদিন সন্ধ্যার সময় কুড়ানির সেই বেদনা ধরিল। পটল তাড়াতাড়ি যতীনকে ডাকিয়া পাঠাইল। যতীন আসিয়া দেখিল, কন্টে কুড়ানির হাতে পায়ে খিল ধরিতেছে,