পাতা:গল্পগুচ্ছ (প্রথম খণ্ড).djvu/২১৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
মহামায়া
২১৫

মহামায়া বুঝিতে পারিল, তাহার নিজের বিবেচনাহীন ব্যবহারেই রাজীবের এতদূর স্পর্ধা বাড়িয়াছে। তৎক্ষণাৎ সে মন্দির ছাড়িয়া চলিয়া যাইতে উদ্যত হইল।

 রাজীব অবস্থা বুঝিয়া তাড়াতাড়ি কহিল, “আমি কালই এ দেশ হইতে চলিয়া যাইতেছি।”

 মহামায়া প্রথমে মনে করিয়াছিল যে ভাবটা দেখাইবে— ‘সে খবরে আমার কী আবশ্যক।’ কিন্তু পারিল না। পা তুলিতে গিয়া পা উঠিল না শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “কেন।”

 রাজীব কহিল, “আমার সাহেব এখান হইতে সোনাপুরের কুঠিতে বদলি হইতেছেন, আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইতেছেন।”

 মহামায়া আবার অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। ভাবিয়া দেখিল, দুইজনের জীবনের গতি দুই দিকে— একটা মানুষকে চিরদিন নজরবন্দি করিয়া রাখা যায় না। তাই চাপা ঠোট ঈষৎ খুলিয়া কহিল, “আচ্ছা।” সেটা কতকটা গভীর দীর্ঘনিশ্বাসের মতো শুনাইল।

 কেবল এই কথাটুকু বলিয়া মহামায়া পুনশ্চ গমনোদ্যত হইতেছে, এমন সময় রাজীব চমকিয়া উঠিয়া কহিল, “চাটুজ্জেমহাশয়!”

 মহামায়া দেখিল, ভবানীচরণ মন্দিরের অভিমুখে আসিতেছে; বুঝিল, তাহাদের সন্ধান পাইয়াছে। রাজীব মহামায়ার বিপদের সম্ভাবনা দেখিয়া মন্দিরের ভগ্নভিত্তি দিয়া লাফাইয়া বাহির হইবার চেষ্টা করিল। মহামায়া সবলে তাহার হাত ধরিয়া আটক করিয়া রাখিল। ভবানীচরণ মন্দিরে প্রবেশ করিলেন— কেবল একবার নীরবে নিস্তব্ধভাবে উভয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন।

 মহামায়া রাজীবের দিকে চাহিয়া অবিচলিত ভাবে কহিল, “রাজীব, তোমার ঘরেই আমি যাইব। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করিয়ো।”

 ভবানীচরণ নিঃশব্দে মন্দির হইতে বাহির হইলেন, মহামায়াও নিঃশব্দে তাঁহার অনুগমন করিল— আর, রাজীব হতবুদ্ধি হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল, যেন তাহার ফাঁসির হুকুম হইয়াছে।