স্বরূপ হরসুন্দরীর কপোল হাসিয়া তর্জনী-আঘাত করিল। এই তো গেল ভূমিকা।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
একটি নোলক-পরা অশ্রুভরা ছোটোখাটো মেয়ের সহিত নিবারণের বিবাহ হইল, তাহার নাম শৈলবালা।
নিবারণ ভাবিল, নামটি বড়ো মিষ্ট এবং মুখখানিও বেশ ঢলোঢলো। তাহার ভাবখানা, তাহার চেহারাখানি, তাহার চলাফেরা একটু বিশেষ মনোযোগ করিয়া চাহিয়া দেখিতে ইচ্ছা করে, কিন্তু সে আর কিছুতেই হইয়া উঠে না। উলটিয়া এমন ভাব দেখাইতে হয় যে, ‘ওই তো একফোঁটা মেয়ে, উহাকে লইয়া তো বিষম বিপদে পড়িলাম, কোনোমতে পাশ কাটাইয়া আমার বয়সোচিত কর্তব্যক্ষেত্রের মধ্যে গিয়া পড়িলে যেন পরিত্রাণ পাওয়া যায়।’
হরসুন্দরী নিবারণের এই বিষম-বিপদগ্রস্ত ভাব দেখিয়া মনে-মনে বড় আমোদ বোধ করিত। এক-একদিন হাত চাপিয়া ধরিয়া বলিত, “আহা, পালাও কোথায়। ওইটুকু মেয়ে, ও তো আর তোমাকে খাইয়া ফেলিবে না।”
নিবারণ দ্বিগুণ শশব্যস্ত ভাব ধারণ করিয়া বলিত, “আরে, রোসো রোসো, আমার একটু বিশেষ কাজ আছে।” বলিয়া যেন পালাইবার পথ পাইত না। হরসুন্দরী হাসিয়া দ্বার আটক করিয়া বলিত, “আজ ফাঁকি দিতে পারিবে না।” অবশেষে নিবারণ নিতান্তই নিরুপায় হইয়া কাতরভাবে বসিয়া পড়িত।
হরসুন্দরী তাহার কানের কাছে বলিত, “আহা, পরের মেয়েকে ঘরে আনিয়া অমন হতশ্রদ্ধা করিতে নাই।”
এই বলিয়া শৈলবালাকে ধরিয়া নিবারণের বাম পাশে বসাইয়া দিত এবং জোর করিয়া ঘোমটা খুলিয়া ও চিবুক ধরিয়া তাহার আনত মুখ তুলিয়া নিবারণকে বলিত, “আহা, কেমন চাঁদের মতো মুখখানি দেখো দেখি।”
কোনোদিন বা উভয়কে ঘরে বসাইয়া কাজ আছে বলিয়া উঠিয়া যাইত