সরল, কৌতুকপ্রিয়, সকল অবস্থাতেই নির্ভীক, অসংকুচিত তাহার চরিত্রে দারিদ্র্যের কোনো লক্ষণই ছিল না।
কিন্তু এই-সকল খেলার মধ্যে এক-একবার জুলিখার হৃদয়ট হায়-হায় করিয়া উঠিত, ভাবিত— সম্রাটপুত্রীর জীবনের এই কি পরিণাম!
একদিন প্রাতে দালিয়া আসিবামাত্র জুলিখা তাহার হাত চাপিয়া কহিল, “দালিয়া, এখানকার রাজাকে দেখাইয়া দিতে পার?”
“পারি। কেন বলে দেখি।”
“আমার একটা ছোরা আছে, তাহার বুকের মধ্যে বসাইতে চাহি।”
প্রথমে দালিয়া কিছু আশ্চর্য হইয়া গেল। তাহার পরে জুলিখার হিংসাপ্রখর মুখের দিকে চাহিয়া তাহার সমস্ত মুখ হাসিতে ভরিয়া গেল; যেন এতবড়ো মজার কথা সে ইতিপূর্বে কখনো শোনে নাই। যদি পরিহাস বল তো এই বটে, রাজপুত্রীর উপযুক্ত। কোনো কথা নাই, বার্তা নাই, প্রথম আলাপেই একখানি ছোরার আধখানা একটা জীবন্ত রাজার বক্ষের মধ্যে চালনা করিয়া দিলে, এইরূপ অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ব্যবহারে রাজাটা হঠাৎ কিরূপ অবাক হইয়া যায়, সেই চিত্র ক্রমাগত তাহার মনে উদিত হইয়া তাহার নিঃশব্দ কৌতুকহাসি থাকিয়া থাকিয়া উচ্চহাস্যে পরিণত হইতে লাগিল।
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
তাহার পরদিনই রহমত শেখ জুলিখাকে গোপনে পত্র লিখিল যে, “আরাকানের নূতন রাজা ধীবরের কুটিরে দুই ভগ্নীর সন্ধান পাইয়াছেন, এবং গোপনে আমিনাকে দেখিয়া অত্যন্ত মুগ্ধ হইয়াছেন। তাহাকে বিবাহার্থে অবিলম্বে প্রাসাদে আনিবার আয়োজন করিতেছেন। প্রতিহিংসার এমন সুন্দর অবসর আর পাওয়া যাইবে না।”
তখন জুলিখা দৃঢ়ভাবে আমিনার হাত ধরিয়া কহিল, “ঈশ্বরের ইচ্ছা স্পষ্টই দেখা যাইতেছে। আমিনা, এইবার তোর জীবনের কর্তব্য পালন করিবার সময় আসিয়াছে, এখন আর খেলা ভালো দেখায় না।”
দালিয়া উপস্থিত ছিল, আমিন তাহার মুখের দিকে চাহিল; দেখিল, সে সকৌতুকে হাসিতেছে।