পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯O গল্পগুচ্ছ একটা আষাঢ়ে গলপ দর সমাদের মধ্যে একটা বীপ। সেখানে কেবল তাসের সাহেব, তাসের বিবি টেক্কা এবং গোলামের বাস। দরি তিরি হইতে নহলা দহলা পযন্ত আরও অনেক-ঘর গহস্থ আছে, কিন্তু তাহারা উচ্চজাতীয় নহে। টেক্কা সাহেব গোলাম এই তিনটেই প্রধান বর্ণ ; নহলা-দহলারা অন্ত্যজ, তাহাদের সহিত এক পঙক্তিতে বসিবার যোগ্য নহে। কিন্তু, চমৎকার শঙ্খেলা। কাহার কত মল্য এবং মযাদা তাহা বহুকাল হইতে স্থির হইয়া গেছে, তাহার রেখামাত্র ইতস্তত হইবার জো নাই। সকলেই যথানিদিষ্টমতে আপন আপন কাজ করিয়া যায়— বংশাবলিরুমে কেবল পববতীদিগের উপর দাগা বলাইয়া চলা । সে যে কী কাজ তাহা বিদেশীর পক্ষে বোঝা শক্ত। হঠাৎ খেলা বলিয়া ভ্রম হয় । কেবল নিয়মে চলাফেরা, নিয়মে যাওযা-আসা, নিয়মে ওঠাপড়া । আদশা হতে তাহাদিগকে চালনা কবিতেছে এবং তাহারা চলিতেছে । তাহাদের মুখে কোনো ভাবের পরিবতন নাই। চিবকাল একমাত্র ভাব ছাপ মারা রহিয়াছে। যেন ফ্যাল-ফ্যাল ছবির মতো। মান্ধাতব অমল হইতে মাথার টপি অবধি পায়ের জন্তা পর্যন্ত অবিকল সমভাবে রহিয়াছে। কখনো কাহাকেও চিন্তা করিতে হয না, বিবেচনা করিতে হয না , সকলেই মৌন নিজীবভাবে নিঃশব্দে পদচারণা করিয়া বেড়ায় ; পতনের সময় নিঃশব্দে পড়িয়া যায় এবং অবিচলিত মুখশ্ৰী লইয়া চিৎ হইয়া আকাশের দিকে তাকাইয়া থাকে । কাহারও কোনো অাশা নাই, অভিলাষ নাই, ভয় নাই, নাতন পথে চলিবাল চেস্টা নাই, হাসি নাই, কান্না নাই, সন্দেহ নাই, বিধা নাই। খাঁচার মধ্যে যেমন পাখি ঝটপট করে, এই চিত্ৰিতবং মতিগুলির অন্তরে সেরাপ কোনো-একটা জীবন্ত প্রাণীর অশান্ত আক্ষেপের লক্ষণ দেখা যায না । অথচ এক কালে এই খাঁচাগুলির মধ্যে জীবের বসতি ছিল তখন খাঁচা দলিত এবং ভিতর হইতে পাখার শব্দ এবং গান শনা যাইত, গভীর অরণা এবং বিস্তৃত আকাশের কথা মনে পড়িত। এখন কেবল পিঞ্জরেব সংকীর্ণতা এবং সশেখেল শ্রেণী বিন্যস্ত লৌহশলাকাগলোই অনুভব করা যায়– পাখি উড়িয়াছে কি মরিয়াছে কি আশ্চর্য তবধতা এবং শান্তি। পরিপাণ বসিত এবং সন্তোষ । পথে ঘাটে গাহে নিত্য-নৈমিত্তিক ক্ষুদ্র কাজ এবং ক্ষুদ্র বিশ্রাম । সমুদ্র অবিশ্রাম একতালশব্দপবেক তটের উপর সহস্ৰ ফেনশভ্রে কোমল করতলের আঘাত কলিয়া সমসত বীপকে নিদ্রাবেশে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিলাছে – পক্ষীমাতার দর পরপারে গাঢ় নীল রেখার মতো বিদেশের আভাস দেখা যায়— সেখান হইতে রাগবেষের বন্দ্ব-কোলাহল-সমুদ্র পার হইয়া আসিতে পারে না।