পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>0ひ 'গল্পগুচ্ছ দিদি – অন্ধকার ঘরে কেহ সাড়া দিল না। সভয়ে উঠিয়া বসিল, মনে পড়িল সেই মৃত্যুশয্যার কথা। সেই হঠাৎ বক্ষের কাছে একটি বেদনা— বাসরোধের উপক্রম। তাহার বড়ো জা ঘরের কোণে বসিয়া একটি অগ্নিকুণ্ডের উপরে খোকার জন্য দুধ গরম করিতেছে– কাদম্বিনী আর দাঁড়াইতে না পারিয়া বিছানার উপর আছাড় খাইয়া পড়িল—রন্ধকণ্ঠে কহিল, দিদি, একবার খোকাকে আনিয়া দাও, আমার প্রাণ কেমন করিতেছে।’ তাহার পর সমস্ত কালো হইয়া আসিল— যেন একটি লেখা খাতার উপরে দোয়াতসন্ধে কালি গড়াইয়া পড়িল-- কাদম্বিনীর সমস্ত মতি এবং চেতনা, বিশ্বগ্রন্থের সমস্ত অক্ষর এক মহতে একাকার হইয়া গেল। খোকা তাহাকে একবার শেষবারের মতো তাহার সেই সমিস্ট ভালোবাসার স্বরে কাকিমা বলিয়া ডাকিয়াছিল কি না, তাহার অনন্ত অজ্ঞাত মরণযাত্রার পথে চিরপরিচিত পথিবী হইতে এই শেষ স্নেহপাথেয়টকুে সংগ্ৰহ করিয়া আনিয়াছিল কি না, বিধবার তাহাও মনে পড়ে না। প্রথমে মনে হইল, যমালয় বুঝি এইরুপ চিরনিজন এবং চিরাধকার। সেখানে কিছই দেখিবার নাই, শনিবার নাই, কাজ করিবার নাই, কেবল চিরকাল এইরুপ জাগিয়া উঠিয়া বসিয়া থাকিতে হইবে। তাহার পর যখন মুক্ত বার দিয়া হঠাৎ একটা ঠাণ্ডা বাদলার বাতাস দিল এবং বর্ষার ভেকের ডাক কানে প্রবেশ করিল, তখন এক মহতে তাহার এই বলপ জীবনের আশৈশব সমসত বর্ষার সমতি ঘনীভূতভাবে তাহার মনে উদয় হইল এবং পথিবীব নিকটসংস্পশ সে অনুভব করিতে পারিল। একবার বিদুৎ চমকিয়া উঠিল; সম্মুখে পঙ্করিণী, বটগাছ, বহৎ মাঠ এবং সদের তরশ্রেণী এক পলকে চোখে পড়িল । মনে পড়িল, মাঝে মাঝে পণ্যে তিথি উপলক্ষে এই পকেরিণীতে আসিয়া মান কবিযাছে, এবং মনে পড়িল, সেই সময়ে এই মশানে মতদেহ দেখিয়া মৃত্যুকে কী ভয়ানক মনে হইত। প্রথমেই মনে হইল, বাড়ি ফিরিয়া যাইতে হইবে। কিন্তু তখনি ভাবিল, আমি তো বাঁচিয়া নাই, আমাকে বাড়িতে লইবে কেন। সেখানে যে অমংগল হইবে। জীবরাজ্য হইতে আমি যে নিবাসিত হইয়া আসিয়াছি— আমি যে আমার প্রেতাত্মা । তাই যদি না হইবে তবে সে এই অধরাত্রে শারদাশংকণে সরক্ষিত অতঃপবে হইতে এই দগম মশানে আসিল কেমন করিয়া। এখনও যদি তার অন্ত্যেষ্টিক্সিযা শেষ না হইয়া থাকে তবে দাহ করিবাব লোকজন গেল কোথায় । শারদাশংকরের আলোকিত গহে তাহার মন্ত্যুর শেষ মহন্ত মনে পড়িল, তাহার পবই এই বহুদরবতী জনশন্য অন্ধকার শমশানের মধ্যে আপনাকে একাকিনী দেখিযা সে জানিল, ‘আমি এই পৃথিবীর জনসমাজের আর কেহ নহি--- আমি অতি ভীষণ, অকল্যাণকারিণী; আমি আমার প্রেতাত্মা।’ এই কথা মনে উদয় হইবামাত্রই তাহার মনে হইল, তাতার চতুদিক হইতে বিশ্ববনিয়মের সমস্ত বন্ধন যেন ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। যেন তাহার অদভূত শক্তি, অসীম স্বাধীনতা—যেখানে ইচ্ছা যাইতে পারে, যাহা ইচ্ছা করিতে পারে। এই অভূতপবে: নতন ভাবের আবিভাবে সে উন্মত্তের মতো হইযা হঠাৎ একটা দমকা লাতাসের মতো ঘর হইতে বাহির হইয়া অন্ধকার শমশানের উপর দিয়া চলিল-- মনে লঙ্গা-ভয়ভাবনার লেশমাত্র রহিল না। #.