পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> ミや গল্পগুচ্ছ 8 পরদিন পণ্ডেরীক ব্যস্ত এবং সমস্ত, বিব্যস্ত এবং বিসমস্তক, বক্ত, তাকা, সেীর, চক্ৰ, পাম, কাকপদ, আদত্তের, মধ্যোত্তর, অন্তোত্তর, বাকোত্তর, শেলাকোত্তর, বচনগুপ্ত, মাত্রাচু্যতক, চু্যতদত্তাক্ষর, অথগঢ়, স্তুতিনিন্দা, অপহৃতি, শািন্ধাপভ্রংশ, শাদী, কালসার, প্রহেলিকা প্রভৃতি অদ্ভুত শব্দচাতুরী দেখাইয়া দিলেন। শুনিয়া সভাসন্ধ লোক বিসময় রাখিতে পথনি পাইল না। শেখর যে-সকল পদ রচনা করিতেন তাহা নিতান্ত সরল— তাহা সুখে দুঃখে উৎসবে আনন্দে সবসাধারণে ব্যবহার করিত। আজ তাহারা পষ্ট বুঝিতে পারিল, তাহাতে কোনো গণপনা নাই; যেন তাহা ইচ্ছা করিলেই তাহারাও রচনা করিতে পারিত, কেবল অনভ্যাস অনিচ্ছা অনবসর ইত্যাদি কারণেই পারে না— নহিলে কথাগুলো বিশেষ নতেনও নহে দরহও নহে, তাহাতে পথিবীর লোকের নন্তন একটা শিক্ষাও হয় না সুবিধাও হয় না। কিন্তু, আজ যাহা শুনিল তাহা অদ্ভুত ব্যাপার, কাল যাহা শনিয়াছিল তাহাতেও বিস্তর চিন্তা এবং শিক্ষার বিষয় ছিল। পণ্ডেরী:কর পাণ্ডিত্য ও নৈপুণ্যের নিকট তাহাদের আপনার কবিটিকে নিতান্ত বালক ও সামান্য লোক বলিয়া মনে হইতে লাগিল । * মৎস্যপাচ্ছের তাড়নায় জলের মধ্যে যে গঢ়ে আন্দোলন চলিতে থাকে, সবোবরের পদ্ম যেমন তাহার প্রত্যেক আঘাত অনুভব করিতে পারে, শেখর তেমনি তাঁহার চতুদিকবতী সভাপথ জনের মনের ভাব হৃদয়ের মধ্যে বুঝিতে পারিলেন । আজ শেষ দিন। আজ জয়পরাজয় নিণায় হইবে । রাজা তাঁহার কবির প্রতি তাঁর দষ্টিপাত করিলেন। তাহার অর্থ এই, আজ নিরক্তের হইয়া থাকিলে চলিবে না, তোমার যথাসাধ্য চেষ্টা করিতে হইবে।” শেখর শ্রাতভাবে উঠিয়া দাঁড়াইলেন ; কেবল এই কটি কথা বলিলেন, “বীণাপাণি, শেবতভুজা, তুমি যদি তোমার কমলবন শুন্য করিয়া আজ মল্লভূমিতে আসিয়া দাঁড়াইলে তবে তোমার চরণাসক্ত যে ভক্তগণ অমতপিপাসী তাহাদের কী গতি হইবে।” মখ ঈষৎ উপরে তুলিয়া করণ করে বলিলেন, যেন বেতভূজা বীণাপাণি নতনয়ন রাজান্তঃপরে জালায়নসম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। তখন পণ্ডেরীক সশব্দে হাস্য কবিলেন, এবং শেখর-শব্দের শেষ দুই অক্ষর গ্রহণ করিয়া অনগ’ল শেলাক রচনা করিয়া গেলেন । বলিলেন, “পলমলনের সহিত খরের কণী সম্পক এবং সংগীতের বিস্তর চর্চা সত্ত্বেও উক্ত প্রাণী কিরাপ ফললাভ করিয়াছে। আর, সরস্বতীর অধিষ্ঠান তো পণ্ডেরীকেই, মহারাজের অধিকারে তিনি কী অপরাধ করিয়াছিলেন যে, এ দেশে তাঁহাকে খরবাহন করিয়া অপমান করা হইতেছে।” পণ্ডিতেরা এই প্রত্যুত্তরে উচ্চস্বরে হাসিতে লাগিলেন। সভাসদেরাও তাঁহাতে যোগ দিল— তাঁহাদের দেখাদেখি সভাসদ্ধে সমস্ত লোক যাহারা বঝিল এবং নাবঝিল, সকলেই হাসিতে লাগিল । ইহার উপযন্ত প্রত্যুত্তরের প্রত্যাশায় রাঙ্গা তাঁহার কবিসখাকে বারবার অঙ্কুশের ন্যায় তীক্ষা দটির বারা তাড়না করিতে লাগিলেন। কিন্তু, শেখর তাহার প্রতি কিছমান্ত মনোযোগ না করিয়া অটলভাবে বসিয়া রহিলেন।