পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏరి0 গল্পগুচ্ছ এ দিকে কাবলিওয়ালা আসিয়া সহস্যে আমাকে সেলাম করিয়া দাঁড়াইল— আমি ভাবিলাম, যদিচ প্রতাপসিংহ এবং কাঞ্চনমালার অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন তথাপি লোকটাকে ঘরে ডাকিয়া আনিয়া তাহার কাছ হইতে কিছ না কেনাটা ভালো হয় না । কিছ কেনা গেল। তাহার পর পাঁচটা কথা আসিয়া পড়িল। আবদর রহমান, রস, ইংরাজ প্রভৃতিকে লইয়া সীমান্তরক্ষানীতি সম্বন্ধে গল্প চলিতে লাগিল। অবশেষে উঠিয়া যাইবার সময় সে জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, তোমার লড়কী কোথায় গেল।” আমি মিনির অমলেক ভয় ভাঙাইয়া দিবার অভিপ্রায়ে তাহাকে অতঃপর হইতে ডাকাইয়া আনিলাম—সে আমার গা ঘোষিয়া কবলির মুখ এবং ঝুলির দিকে সন্দিগ্ধ নেত্রক্ষেপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। কাবলি ঝুলির মধ্য হইতে কিসমিস খোবানি বাহির করিয়া তাহাকে দিতে গেল, সে কিছুতেই লইল না, বিগণ সন্দেহের সহিত আমার হাঁটর কাছে সংলগ্ন হইয়া রহিল। প্রথম পরিচয়টা এমনি ভাবে গেল । কিছুদিন পরে একদিন সকালবেলায় আবশ্যকবশত বাড়ি হইতে বাহির হইবার সময় দেখি, আমার দহিতাটি বারের সমীপপথ বেঞ্চির উপর বসিয়া অনগ’ল কথা কহিয়া যাইতেছে এবং কাবলিওয়ালা তাহার পদতলে বসিয়া সহাস্যমন্খে শনিতেছে এবং মধ্যে মধ্যে প্রসঙ্গক্লমে নিজের মতামতও দো-অশিলা বাংলায় ব্যক্ত করিতেছে। মিনির পঞ্চবষীয় জীবনের অভিজ্ঞতায় বাবা ছাড়া এমন ধৈৰ্যবান শ্রোতা সে কখনো পায় নাই। আবার দেখি, তাহার ক্ষুদ্র অচিল বাদাম-কিসমিসে পরিপািণ । আমি কাবুলিওয়ালাকে কহিলাম, “উহাকে এ-সব কেন দিয়াছ। অমন আর দিয়ো না।” বলিয়া পকেট হইতে একটা আধলি লইয়া তাহাকে দিলাম। সে অসংকোচে আধলি গ্রহণ করিয়া ঝুলিতে পরিল। বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া দেখি, সেই আধলিটি লইয়া ষোলো-আনা গোলযোগ বাধিয়া গেছে। মিনির মা একটা শেবত চকচকে গোলাকার পদাৰ্থ লইয়া ভৎসনার স্বরে মিনিকে জিজ্ঞাসা করিতেছেন, “তুই এ আধলি কোথায় পেলি।” মিনি বলিতেছে, “কাবলিওয়ালা দিয়েছে।” བཤད་ན།" মা বলিতেছেন, “কাবলিওয়ালার কাছ হইতে আধলি তুই কেন নিতে !” মিনি কুন্দনের উপক্ৰম করিয়া কহিল, “আমি চাই নি, সে আপনি দিলে।” আমি আসিয়া মিনিকে তাহার আসন্ন বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়া বাহিরে লইয়া গেলাম । সংবাদ পাইলাম, কাবলিওয়ালার সহিত মিনির এই যে দ্বিতীয় সাক্ষাৎ তাহা নহে, ইতিমধ্যে সে প্রায় প্রত্যহ আসিয়া পেস্তাবাদাম ঘাষ দিয়া মিনির ক্ষদ্র লাখ হৃদয়টুকু অনেকটা অধিকার করিয়া লইয়াছে। দেখিলাম, এই দটি বন্ধর মধ্যে গুটিকতক বাঁধা কথা এবং ঠাট্টা প্রচলিত আছে— যথা রহমতকে দেখিবামার আমার কন্যা হাসিতে হাসিতে জিজ্ঞাসা করিত, “কাবলিওয়ালা, ও কাবলিওয়ালা, তোমার ও কলির ভিতর কাঁ।”