পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫O গল্পগুচ্ছ হন ব্যবহারেই রাজীবের এতদর পধা বাড়িয়াছে। তৎক্ষণাৎ সে মন্দির ছাড়িয়া মহামায়া প্রথমে মনে করিয়াছিল যে ভাবটা দেখাইবে— ‘সে খবরে আমার কী আবশ্যক। কিন্তু পারিল না। পা তুলিতে গিয়া পা উঠিল না— শান্তভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “কেন।” রাজীব কহিল, “আমার সাহেব এখান হইতে সোনাপরের কুঠিতে বদলি হইতেছেন, আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইতেছেন।" মহামায়া আবার অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। ভাবিয়া দেখিল, দুইজনের জীবনের গতি দই দিকে—একটা মানুষকে চিরদিন নজরবন্দি করিয়া রাখা যায় না। তাই চাপা ঠোঁট ঈষৎ খালিয়া কহিল, "আচ্ছা।" সেটা কতকটা গভীর দীর্ঘনিশবাসের মতো শনাইল । কেবল এই কথাটুকু বলিয়া মহামাযা পনশ্চ গমনোদ্যত হইতেছে, এমন সময় মহামায়া দেখিল, ভবানীচরণ মন্দিরের অভিমুখে আসিতেছে ; বুঝিল, তাহাদের সন্ধান পাইয়াছে। রাজীব মহামায়ার বিপদের সম্পভাবনা দেখিয়া মন্দিরের ভজনভিত্তি দিয়া লাফাইয়া বাহির হইবার চেষ্টা করিল। মহামাযা সবলে তাহার হাত ধবিয়া আটক করিয়া রাখিল। ভবানীচরণ মন্দিরে প্রবেশ করিলেন— কেবল একবার নীরবে নিস্তব্ধভাবে উভয়ের প্রতি দস্টিপাত করিলেন। আমি যাইব। তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করিযো।” ভবানীচরণ নিঃশব্দে মন্দির হইতে বাহির হইলেন, মহামায়াও নিঃশব্দে তাঁহার হকুম হইয়াছে। সেই রাত্রেই ভবানীচরণ একখানা লাল চেলি আনিয়া মহামায়াকে বলিলেন, “এইটে পরিয়া আইস ।” মহামায়া পরিয়া আসিল । তাহার পর বলিলেন, “আমার সঙ্গে চলো।” ভবানীচরণের আদেশ, এমনকি সংকেতও কেহ কখনো অমান্য করে নাই । মহামায়াও না । সেই রাত্রে উভয়ে নদীতীরে মশান-অভিমুখে চলিলেন। মশান বাড়ি হইতে অধিক দর নহে। সেখানে গঙ্গাযাত্রীর ঘরে একটি বন্ধ ব্রাহ্মণ মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করিতেছিল। তাহারই শয্যাপাশেব উভয়ে গিয়া দাঁড়াইলেন। ঘরের এক কোণে পরোহিত ব্রাহয়ণ উপস্থিত ছিল, ভবানীচরণ তাহাকে ইঙ্গিত করিলেন। সে অবিলবে শভানষ্ঠোনের আয়োজন করিয়া লইযা প্রস্তুত হইয়া দাঁড়াইল; মহামায়া বঝিল, এই