পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>○ ミ গল্পগুচ্ছ মহামায়া কহিল, “তবে এখনি চলো—তোমার সাহেব যেখানে বদলি হইয়াছে সেইখানে যাই।” ঘরে যাহা-কিছ ছিল সমস্ত ফেলিয়া রাজীব মহামায়াকে লইয়া সেই ঝড়ের মধ্যে বাহির হইল। এমনি ঝড় যে দাঁড়ানো কঠিন— ঝড়ের বেগে কঙ্কর উড়িয়া আসিয়া ছিটা গলির মতো গায়ে বিধিতে লাগিল। মাথার উপরে গাছ ভাঙিয়া পড়িবার ভয়ে পথ ছাড়িয়া উভয়ে খোলা মাঠ দিয়া চলিতে লাগিল। বায়রে বেগ পশ্চাৎ হইতে আঘাত করিল। যেন ঝড়ে লোকালয় হইতে দুইটা মানুষকে ছিন্ন করিয়া প্রলয়ের দিকে উড়াইয়া লইয়া চলিয়াছে। তৃতীয় পরিচ্ছেদ গল্পটা পাঠকেরা নিতান্ত অমলেক অথবা অলৌকিক মনে করিবেন না। যখন সহমরণপ্রথা প্রচলিত ছিল তখন এমন ঘটনা কদাচিৎ মাঝে মাঝে ঘটিতে শনা গিয়াছে। মহামায়ার হাত পা বধিয়া তাহাকে চিতায় সমপণ করিয়া যথাসময়ে অগ্নিপ্রয়োগ করা হইয়াছিল। অনিও ধ ধ করিয়া ধরিয়া উঠিয়াছে, এমন সময়ে প্রচণ্ড ঝড় ও মনুষলধারে ব্যষ্টি আরম্ভ হইল। যাহারা দাহ করিতে আসিয়াছিল তাহারা তাড়াতাড়ি গঙ্গাযাত্রীর ঘরে আশ্রয় লইয়া বার রন্ধ করিযা দিল। ব্যষ্টিতে চিতানল নিবিতে বিলম্বব হইল না। ইতিমধ্যে মহামায়ার হাতের বন্ধন ভস্ম হইয়া তাহার হাতদুটি মুক্ত হইয়াছে। অসহ্য দাহযন্ত্রণায় একটিমাত্র কথা না কহিয়া মহামায়া উঠিয়া বসিয়া পায়ের বন্ধন খলিল। তাহার পর, পথানে সথানে দগধ বস্ত্রখণ্ড গাত্রে জড়াইয়া উলঙ্গপ্রায় মহামায়া চিতা হইতে উঠিয়া প্রথমে আপনার ঘরে ফিরিয়া আসিল। গহে কেহই ছিল না, সকলেই মশানে। প্রদীপ জালিয়া একখানি কাপড় পরিয়া মহামায়া একবার দপণে মুখ দেখিল। দপণ ভূমিতে আছাড়িয়া ফেলিয়া একবার কী ভাবিল। তাহার পর মুখের উপর দীর্ঘ ঘোমটা টানিয়া আদরবতী রাজীবের বাড়ি গেল। তাহার পর কণী ঘটিল পাঠকের অগোচর নাই । মহামায়া এখন রাজীবের ঘরে, কিন্তু বাজীবের জীবনে সুখ নাই । অধিক নহে, উভয়ের মধ্যে কেবল একখানিমাত্র ঘোমটার ব্যবধান । কিন্তু সেই ঘোমটাটুকু মৃত্যুর ন্যায় চিরস্থায়ী, অথচ মৃত্যুর অপেক্ষা যন্ত্রণাদায়ক। কারণ, নৈরাশ্যে মাতুর বিচ্ছেদবেদনাকে কালক্ৰমে অসাড় করিয়া ফেলে, কিন্তু এই ঘোমটার বিচ্ছেদটকুর মধ্যে একটি জীবন্ত আশা প্রতিদিন প্রতি মহেতে পীড়িত হইতেছে। একে মহামায়ার চিরকালই একটা নিস্তব্ধ নীরব ভাব আছে, তাহাতে এই ঘোমটার ভিতরকার নিস্তব্ধতা বিগণ দুঃসহ বোধ হয়। সে যেন একটা মৃত্যুর মধ্যে আবত হইয়া বাস করিতেছে। এই নিস্তব্ধ মৃত্যু রাজীবের জীবনকে আলিঙ্গন করিয়া প্রতিদিন যেন বিশৗণ করিতে লাগিল। রাজীব পাবে যে মহামায়াকে জানিত তাহাকেও হারাইল এবং তাহার সেই আশৈশব সন্দের সমতিকে যে আপনার সংসারে প্রতিষ্ঠিত করিয়া রাখিবে, এই ঘোমটাচ্ছন্ন মতি চিরদিন পাবে থাকিয়া নীরবে তাহাতেও বাধা দিতে লাগিল। রাজীব ভাবিত, মানুষে মানুষে স্বভাবতই যথেষ্ট ব্যবধান আছে—বিশেষত মহামায়া প্রাণবর্ণিত কণের মতো সহজ-কবচ-ধারী, সে