পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సిమS গল্পগুচ্ছ আহারান্তে মা অপবর বিবাহের প্রস্তাব উত্থাপন করিলেন। অপব সেজন্য প্রস্তুত হইয়া ছিল। কারণ, প্রস্তাব অনেক পবেই ছিল, কিন্তু পত্র নব্যতন্ত্রের নতন ধয়া ধরিয়া জেদ করিয়া বসিয়াছিল যে, বি.এ. পাস না করিয়া বিবাহ করিব না। এতকাল জননী সেইজন্য অপেক্ষা করিয়া ছিলেন, অতএব এখন আর-কোনো ওজর করা মিথ্যা। অপব কহিল, “আগে পাত্রী দেখা হউক, তাহার পর স্থির হইবে।” মা কহিলেন, “পাত্রী দেখা হইয়াছে, সেজন্য তোকে ভাবিতে হইবে না।” অপব ওই ভাবনাটা নিজে ভাবিতে প্রস্তুত হইল এবং কহিল, “মেয়ে না দেখিয়া বিবাহ করিতে পারিব না।” মা ভাবিলেন, এমন সন্টিছাড়া কথাও কখনো শোনা যায় নাই; কিন্তু সম্মত হইলেন। সে রাত্রে অপব প্রদীপ নিবাইয়া বিছানায় শয়ন করিলে পর বর্ষানিশীথের সমস্ত শব্দ এবং সমস্ত নিস্তব্ধতার পরপ্রান্ত হইতে বিজন বিনিদ্র শয্যায় একটি উচ্ছসিত উচ্চ মধর কণ্ঠের হাস্যধৰনি তাহার কানে আসিয়া ক্ৰমাগত বাজিতে লাগিল। মন নিজেকে কেবলই এই বলিয়া পীড়া দিতে লাগিল যে, সকালবেলাকার সেই পদস্খলনটা ষেন কোনো একটা উপায়ে সংশোধন করিয়া লওয়া উচিত। বালিকা জানিল না যে, ‘আমি অপব কৃষ্ণ অনেক বিদ্যা উপাজন করিয়াছি, কলিকাতায় বহনকাল যাপন করিয়া আসিয়াছি, দৈবাৎ পিছলে পা দিয়া কাদায় পড়িয়া গেলেও আমি উপহাস্য উপেক্ষণীয় একজন ষে-সে গ্রাম্য যবেক নহি ।” পরদিন অপব কনে দেখিতে যাইবে । অধিক দরে নহে, পাড়াতেই তাহাদের বাড়ি। একটা বিশেষ যত্নপবেক সাজ করিল। ধতি ও চাদর ছাড়িয়া সিকের চাপকান জোবা, মাথায় একটা গোলাকার পাগড়ি, এবং বানিশকরা একজোড়া জতা পায়ে দিয়া, সিলেকর ছাতা হস্তে প্রাতঃকালে বাহির হইল । সম্ভাবিত শ্বশুরবাড়িতে পদাপণ করিবামার মহা সমারোহ-সমাদরের ঘটা পড়িয়া গেল। অবশেষে যথাকালে কম্পিতহাদয় মেয়েটিকে ঝাড়িয়া মছিয়া, রঙ করিয়া, খোঁপার রাংতা জড়াইয়া, একখানি পাংলা রঙিন কাপড়ে মুড়িয়া বরের সম্মখে আনিয়া উপস্থিত করা হইল। সে এক কোণে নীরবে মাথা প্রায় হাঁটর কাছে ঠেকাইয়া বসিয়া রহিল এবং এক প্রৌঢ়া দাসী তাহাকে সাহস দিবার জন্য পশ্চাতে উপস্থিত রহিল। কনের এক বালক ভাই তাহাদের পরিবারের মধ্যে এই এক নতন অনধিকার-প্রবেশোদ্যত লোকটির পাগড়ি, ঘড়ির চেন এবং নবোগত শমশ্র একমনে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। অপব’ কিয়ৎকাল গোঁফে তা দিয়া অবশেষে গভীরভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কী পড়।” বসনভূষণাচ্ছন্ন লক্ষজাতপের নিকট হইতে তাহার কোনো উত্তর পাওয়া গেল না। দুই-তিনবার প্রশন এবং প্রৌঢ়া দাসীর নিকট হইতে পষ্ঠদেশে বিস্তর উৎসাহজনক করতাড়নের পর বালিকা মদসবরে এক নিশবাসে অত্যন্ত দ্রত বলিয়া গেল, চারপাঠ দ্বিতীয় ভাগ, ব্যাকরণসার প্রথম ভাগ, ভূগোলবিবরণ, পাটিগণিত, ভারতবর্ষের ইতিহাস। এমন সময় বহিদেশে একটা অশান্ত গতির ধাপ ধাপ শব্দ শোনা গেল এবং মনহতের মধ্যে দৌড়িয়া হাঁপাইয়া পিঠের চুল দোলাইয়া মন্ময়ী ঘরে আসিয়া প্রবেশ করিল। অপবীকৃষ্ণের প্রতি দকপাত না করিয়া একেবারে কনের ভাই রাখালের হাত ধরিয়া টানাটানি আরম্ভ করিয়া দিল। রাখাল তখন আপন পর্যবেক্ষণশক্তির চর্চায় একান্তমনে নিযুক্ত ছিল, সে কিছুতেই উঠিতে চাহিল না। দাসীটি তাহার সংযত