পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমাপিত ミOG。 যাইবার সময় হইয়াছে। চলো তোমাকে তোমার মার বাড়ি রাখিয়া আসি।” মন্ময়ী শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলে অপব তাহার দই হাত ধরিয়া কহিল, “এখন আমার একটি প্রার্থনা আছে। আমি অনেক সময় তোমার অনেক সাহাব্য করিয়াছি, আজ যাইবার সময় তাহার একটি পরস্কার দিবে ?” মন্ময়ী বিস্মিত হইয়া কহিল, “কাঁ।” অপব কহিল, “তুমি ইচ্ছা করিয়া, ভালোবাসিয়া আমাকে একটি চুম্বন দাও।” অপবর এই অদ্ভুত প্রার্থনা এবং গভীর মুখভাব দেখিয়া মন্ময়ী হাসিয়া উঠিল। হাস্য সবরণ করিয়া মুখ বাড়াইয়া চুম্বন করিতে উদ্যত হইল— কাছাকাছি গিয়া আর পারিল না। খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল। এমন দুইবার চেষ্টা করিয়া অবশেষে নিরস্ত হইয়া মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে লাগিল। শাসনচ্ছলে অপব তাহার কণামলে ধরিয়া নাড়িয়া দিল । অপবর বড়ো কঠিন পণ। দসাবত্তি করিয়া কাড়িয়া লটিয়া লওয়া সে আত্মাবমাননা মনে করে । সে দেবতার ন্যায় সগৌরবে থাকিয়া স্বেচ্ছানীত উপহার চায়, নিজের হাতে কিছুই তুলিয়া লইবে না। মন্ময়ী আর হাসিল না। তাহাকে প্রত্যুষের আলোকে নিজন পথ দিয়া তাহার মার বাড়ি রাখিয়া অপব গহে আসিয়া মাতাকে কহিল, “ভাবিয়া দেখিলাম, বউকে আমার সঙ্গে কলিকাতায় লইয়া গেলে আমার পড়াশনার ব্যাঘাত হইবে, সেখানে উহারও কেহ সঙ্গিনী নাই। তুমি তো তাহাকে এ বাড়িতে রাখিতে চাও না, আমি তাই তাহার মার বাড়িতেই রাখিয়া আসিলাম।” সুগভীর অভিমানের মধ্যে মাতাপত্রের বিচ্ছেদ হইল । সপ্তম পরিচ্ছেদ . মার বাড়িতে আসিয়া মন্ময়ী দেখিল, কিছুতেই আর মন লাগিতেছে না। সে বাড়ির আগাগোড়া যেন বদল হইয়া গেছে । সময় আর কাটে না। কী করিবে, কোথায় যাইবে, কাহার সহিত দেখা করিবে. ভাবিয়া পাইল না। মন্ময়ীর হঠাৎ মনে হইল, যেন সমস্ত গহে এবং সমস্ত গ্রামে কেহ লোক নাই। যেন মধ্যাহ্নে সত্য গ্রহণ হইল। কিছুতেই বকিতে পারিল না, আজ কলিকাতায় চলিয়া যাইবার জন্য এত প্রাণপণ ইচ্ছা করিতেছে, কাল রাত্রে এই ইচ্ছা কোথায় ছিল; কাল সে জানিত না যে, জীবনের যে অংশ পরিহার করিয়া যাইবার জন্য এত মন-কেমন করিতেছিল তৎপশ্চাবেই তাহার সম্পণে সবাদ পরিবতন হইয়া গিয়াছে। গাছের পঙ্ক ছ:ড়িয়া ফেলিল। গল্পে শনা যায়, নিপুণ অস্কার এমন সক্ষম তরবারি নিমাণ করিতে পারে যে, তম্বারা মানুষকে বিখণ্ড করিলেও সে জানিতে পারে না, অবশেষে নাড়া দিলে দই অধ্যখণ্ড ভিন্ন হইয়া যায়। বিধাতার তরবারি সেইয়াপ সক্ষম, কখন তিনি মন্ময়ীর বাল্য ও যৌবনের মাঝখানে আঘাত করিয়াছিলেন সে জানিতে পারে নাই; আজ কেমন করিয়া নাড়া পাইয়া বাল্য-অংশ যৌবন হইতে বিচু্যত হইয়া পড়িল এবং