পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

יא ミ○○ গল্পগুচ্ছ কাঁদিতে লাগিল; এমন অকারণ কান্না প্রতিদিন কত বালিকা কাদিয়া থাকে। উহার মধ্যে লক্ষ্য করিবার বিষয় কিছই ছিল না। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ শশিভূষণের আইন-সম্বন্ধীয় গবেষণা এবং বস্তৃতাচৰ্চা কী কারণে ব্যথ হইয়া গেল তাহা পাঠকদের অগোচর নাই। ম্যাজিস্ট্রেটের নামে মকদ্দমা অকস্মাং মিটিয়া গেল। হরকুমার তাঁহাদের জেলার বেঞ্চে অনরার ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হইলেন। একখানা মলিন চাপকান ও তৈলাক্ত পাগড়ি পরিয়া হরকুমার আজকাল প্রায়ই জেলায় গিয়া সাহেবদিগকে নিয়মিত সেলাম করিয়া আসেন । শশিভূষণের সেই কালো মোট বইখানার প্রতি এতদিন পরে গিরিবালার অভিশাপ ফলিতে আরম্ভ করিল, সে একটি অন্ধকার কোণে নিবাসিত হইয়া অনাদত বিসমতভাবে ধুলিস্তরসংগ্রহে প্রবত্ত হইল। কিন্তু তাহার অনাদর দেখিয যে বালিকা আনন্দ লাভ করিবে সেই গিরিবালা কোথায় । শশিভূষণ যেদিন প্রথম আইনের গ্রন্থ বন্ধ করিয়া বসিলেন সেই দিনই হঠাৎ বঝিতে পারিলেন, গিরিবালা আসে নাই। তখন একে একে কয়দিনের ইতিহাস অলপ অল্পে তাঁহার মনে পড়িতে লাগিল। মনে পড়িতে লাগিল, একদিন উজ্জল প্রভাতে গিরিবালা অঞ্চল ভরিয়া নববষার আদ্র বকুলফুল আনিয়াছিল । তাহাকে দেখিয়াও যখন তিনি গ্রন্থ হইতে দটি তুলিলেন না তখন তাহার উচ্ছদাসে সহসা বাধা পড়িল । সে তাহার অঞ্চলবিন্ধ একটা সাঁচসমতা বাহির করিয়া নতশিরে একটি একটি করিয়া ফলে লইয়া মালা গাঁথিতে লাগিল—মালা অত্যন্ত ধীরে ধীরে গথিল, অনেক বিলম্বে শেষ হইল, বেলা হইয়া আসিল, গিরিবালার ঘরে ফিরিবার সময় হইল, তথাপি শশিভূষণের পড়া শেষ হইল না। গিরিবালা মালাটা তণ্ডপোষের উপর রাখিয়া লানভাবে চলিয়া গেল। মনে পড়িল, তাহার অভিমান প্রতিদিন কেমন করিয়া ঘনীভূত হইয়া উঠিল; কবে হইতে সে তাঁহার ঘরে প্রবেশ না করিয়া ঘরের সম্মুখবতী পথে মধ্যে মধ্যে দেখা দিত এবং চলিয়া যাইত : অবশেষে কবে হইতে লালিকা সেই পথে আসাও বন্ধ করিয়াছে, সেও তো আজ কিছুদিন হইল। গিরিবালীন অভিমান তো এতদিন সথায়ী হয় না। শশিভূষণ একটা দীঘনিশ্বাস ফেলিয়, হতবুদ্ধি হতকমের মতো দেয়ালে পিঠ দিয়া বসিয়া রহিলেন। ক্ষদ্র ছাত্রীটি না আসাতে তাঁহার পাঠ্যগ্রন্থগুলি নিতান্ত বিসবাদ হইয়া আসিল। বই টানিয়া টানিয়া লইয়া দুই-চারি পাতা পড়িয়া ফেলিয়া দিতে হয়। লিখিতে লিখিতে ক্ষণে ক্ষণে সচকিতে পথের দিকে লারের অভিমুখে প্রতীক্ষাপণ দটি বিক্ষিপ্ত হইতে থাকে এবং লেখা ভঙ্গ হয় । শশিভূষণের আশঙ্কা হইল, গিরিবালার অসুখ হইয় থাকিবে । গোপনে সন্ধান লইয়া জানিলেন, সে আশঙ্কা অমলক । গিরিবালা আজকাল আর ঘর হইতে বাহির হয় না। তাহার জন্য পার সিথর হইয়াছে। গিরি যেদিন চারপাঠের ছিন্নখণ্ডে গ্রামের পঙ্কিল পথ বিকীর্ণ করিয়াছিল তাহার পরদিন প্রত্যুষে ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিচিত্র উপহার সংগ্ৰহ করিয়া দুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিতেছিল। অতিশয় গ্রীষ্ম হওয়াতে নিদ্রাহীন রাত্রি অতিবাহন করিয়া ভুরকুমার