পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০৮ - । গল্পগুচ্ছ অভূতপবে ইতিহাস সজিত হইতেছে, তাহার আর সংখ্যা নাই। এই বউভাতের নিমন্ত্রণস্থলে, এই আনন্দকাষের মধ্যে দটি দই রকমের মানুষের দেখা হইল, এবং দেখিতে-দেখিতে সংসারের অশ্রান্ত জালবনানির মধ্যে একটা নতন বণের সত্ৰ উঠিয়া পড়িল এবং একটা নতন রকমের গ্রন্থি পড়িয়া গেল। সকলের আহারাদি শেষ হইয়া গেলে ইন্দ্রাণী বৈকালের দিকে কিছু বিলম্বেব মনিববাড়িতে গিয়া উপস্থিত হইয়াছিল। বিনোদের সী নয়নতারা যখন বিলবের কারণ জিজ্ঞাসা করিল, ইন্দ্রাণী গহকমের ব্যস্ততা, শাবীরিক অস্বাস্থ্য প্রভৃতি দুই-চারিটা কারণ প্রদর্শন করিল, কিন্তু তাহা কাহারও সন্তোষজনক বোধ হইল না। প্রকৃত কারণ যদিও ইন্দ্রাণী গোপন করিল তথাপি তাহা বঝিতে কাহারও বাকি রহিল না। সে কারণটি এই—মকুন্দবাবরা প্রভু, ধনী বটেন, কিন্তু কুলমযাদার গৌরীকান্ত তাঁহাদের অপেক্ষা অনেক শ্রেষ্ঠ। ইন্দ্রাণী সে শ্রেষ্ঠতা ভুলিতে পারে না। সেইজন্য মনিবের বাড়ি পাছে খাইতে হয় এই ভয়ে সে যথেষ্ট বিলম্বব করিয়া গিয়াছিল। তাহার অভিসন্ধি বুঝিয়া তাহাকে খাওয়াইবার জন্য বিশেষ পীড়াপীড়ি করা হইয়াছিল, কিন্তু ইন্দ্রাণী পরাস্ত হইবার মেয়ে নহে, তাহাকে কিছুতেই খাওয়ানো গেল না । একবার মকুন্দ এবং গৌরীকান্ত বৰ্তমানেও কুলাভিমান লইয়া ইহা অপেক্ষা বহত্তর বিপ্লব বাধিয়াছিল। সে ঘটনা এই পথানে উল্লেখ করা যাইতে পারে। ইন্দ্রাণী দেখিতে বড়ো সন্দের। আমাদের ভাষায় সন্দেরীর সহিত স্থিরসৌদামিনীর তুলনা প্রসিদ্ধ আছে। সে তুলনা অধিকাংশ স্থলেই খাটে না কিন্তু ইন্দ্রাণীকে খাটে। ইন্দ্রাণী যেন আপনার মধ্যে একটা প্রবল বেগ এবং প্রখর জবালা একটি সহজ শক্তির বারা আটল গাম্ভীৰ্যপাশে অতি অনায়াসে বধিয়া রাখিয়াছে । বিদ্যুৎ তাহার মুখে চক্ষে এবং সবাঙ্গে নিত্যকাল ধরিয়া নিস্তব্ধ হইয়া রহিয়াছে। এখানে তাহার চপলতা নিষিদ্ধ । এই সন্দেরী মেয়েটিকে দেখিয়া মুকুন্দবাব তাঁহাব পোষ্যপত্রের সহিত ইহার বিবাহ দিবার প্রস্তাব গৌরীকান্তের নিকট উত্থাপিত করিয়াছিলেন। প্রভূভক্তিতে গৌরীকান্ত কাহারও নিকটে নান ছিলেন না; তিনি প্রভুর জন্য প্রাণ দিতে পারিতেন; এবং তাঁহার অবস্থার যতই উন্নতি হউক এবং কত তাঁহার প্রতি বন্ধর ন্যায় ব্যবহার করিয়া তাঁহার যতই প্রশ্রয় দিন, তিনি কখনও ভ্ৰমেও বনেও প্রভুর সম্মান বিস্মত হন নাই ; প্রভুর সম্মুখে, এমন কি, প্রভুর প্রসঙ্গে তিনি যেন সন্নত হইয়া পড়িতেন— কিন্তু এই বিবাহের প্রস্তাবে তিনি কিছতেই সম্মত হন নাই। প্রভূভক্তির দেনা তিনি কড়ার গণ্ডায় শোধ করিতেন, কুলম্যাদার পাওনা তিনি ছাড়িবেন কেন : মৰুন্দলালের পত্রের সহিত তিনি তাঁহার পৌত্রীর বিবাহ দিতে পারেন না। ভূত্যের এই কুলগব মুকুন্দলালের ভালো লাগে নাই। তিনি আশা করিয়াছিলেন, এই প্রস্তাবের বারা তাঁহার ভক্ত সেবকের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করা হইবে। গৌরীকান্ত যখন কথাটা সে ভাবে লইলেন না তখন মকুন্দলাল কিছুদিন তাঁহার সহিত বাক্যালাপ বধ করিয়া তাঁহাকে অত্যন্ত মনঃকষ্ট দিয়াছিলেন। প্রভুর এই বিমখভাব গৌরীকান্তের বক্ষে মতু শেলের ন্যায় বাজিয়াছিল, কিন্তু তথাপি তিনি তাঁহার পৌত্রীর সহিত এক পিতৃমাতৃহীন দরিদ্র কুলীনসন্তানের বিবাহ দিয়া তাহাকে