পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ථදි8 গল্পগুচ্ছ দেখা যাইত না। আমিও সেই ঘণমান বিচ্ছিন্ন অংশগুলির অনুসরণ করিয়া সমস্ত রাত্রি ঘরে ঘরে ঘুরিয়া বেড়াইতাম । এই খণ্ডস্বনের আবতের মধ্যে, এই কচিং হেনার গন্ধ, কচিৎ সেতারের শব্দ, কচিং সরভিজলশীকরমিশ্র বায়র হিল্লোলের মধ্যে একটি নায়িকাকে ক্ষণ ক্ষণে বিদংেশিখার মতো চকিতে দেখিতে পাইতাম। তাহারই জাফরান রঙের পায়জামা, এবং দটি শত্ররক্তিম কোমল পায়ে বকশীষ জরির চটি পরা, বক্ষে অতিপিনদ্ধ জরির ফলকাটা কাচুলি আবদ্ধ, মাথায় একটি লাল টপি এবং তাহা হইতে সোনার ঝালর ঝলিয়া তাহার শত্র ললাট এবং কপোল বেস্টন করিয়াছে। সে আমাকে পাগল করিয়া দিয়াছিল। আমি তাহারই অভিসারে প্রতি রাত্রে নিদ্রার রসাতলরাজ্যে সবনের জটিলপথসংকুল মায়াপরার মধ্যে গলিতে গলিতে কক্ষে কক্ষে ভ্রমণ করিয়া বেড়াইয়াছি। এক-একদিন সন্ধ্যার সময় বড়ো আয়নার দুই দিকে দুই বাতি জালাইয়া যত্নপাবক শাহজাদার মতো সাজ করিতেছি এমন সময় হঠাৎ দেখিতে পাইলাম, আয়নায় আমার প্রতিবিশ্বের পাবে ক্ষণিকের জন্য সেই তরণী ইরানীর ছায়া আসিয়া পড়িল— পলকের মধ্যে গ্রীবা বাঁকাইয়া, তাহার ঘনকৃষ্ণ বিপুল চক্ষ-তরকায় সুগভীর আবেগতীত্র বেদনাপণ আগ্রহকটাক্ষপাত করিয়া, সরস সন্দের বিষ্ণবধরে একটি অসফট ভাষার আভাসমাত্ৰ দিয়া, লঘু ললিত নতো আপন যৌবনপপিত দেহলতটিকে দ্রুত বেগে উধৰ্ম্মাভিমুখে আবতিত করিয়া— মহন্তকালেব মধ্যে বেদনা বাসনা ও বিভ্রমের, হাস্য কটাক্ষ ও ভূষণজ্যোতির সফলিঙ্গ ব্যষ্টি করিযা দিয়া দপণেই মিলাইযা গেল । গিরিকাননের সমস্ত সুগন্ধ লুন্ঠন করিয়া একটা উন্দম বয়রে উচ্ছমাস আসিয়া আমার দুইটা বাতি নিবাইয়া দিত ; আমি সাজসজা ছাড়িয়া দিয়া বেশগহের প্রান্তবতী শয্যাতলে পুলকিতদেহে মুদ্রিতনেত্ৰে শয়ন করিয়া থাকিতাম— আমার চরি দিকে সেই বাতাসের মধ্যে, সেই অরালী গিরিকুঞ্জের সমস্ত মিশ্রিত সৌরভের মধ্যে যেন অনেক আদর অনেক চুম্বন অনেক কোমল কবপশী নিভৃত অন্ধকার পণ করিয়া ভাসিয়া বেড়াইত, কানের কাছে অনেক কলগঞ্জেন শুনিতে পাইতাম, আমার কপালের উপর সুগন্ধ নিশবাস আসিয়া পড়িত/ এবং আমার কপোলে একটি মন্দসৌরভরমণীয় সকোমল ওড়না বারবার উড়িয়া উড়িয়া আসিয়া পশ কবিত। অল্পে অপে যেন একটি মোহিনী সপিণী তাহার মাদকবেস্টনে আমার সব গুগ বধিয়া ফেলিত, আমি গাঢ় নিশবাস ফেলিয়া অসাড় দেহে সুগভীর নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িতাম । একদিন অপরাহ্লে আমি ঘোড়ায় চড়িয়া বাহির হইব সংকল্প করিলাম-- কে আমাকে নিষেধ করিতে লাগিল জানি না— কিন্তু সেদিন নিষেধ মানিলাম না। একটা কাঠদণ্ডে আমার সাহেবি হ্যাট এবং খাটো কোতা দলিতেছিল, পাড়িয়া লইয়া পরিবার উপক্রম করিতেছি, এমন সময় শস্তো নদীর বালি এবং অরালী পবতের শক পল্লবরাশির ধনজা তুলিয়া হঠাৎ একটা প্রবল ঘর্ণবাতাস আমার সেই কোতা এবং টপি ঘরাইতে ঘরাইতে লইয়া চলিল এবং একটা অত্যন্ত সমিস্ট কলহাস্য সেই হাওয়ার সঙ্গে ঘরিতে ঘুরিতে কৌতুকের সমস্ত পদায় পদায় আঘাত করিতে করিতে উচ্চ হইতে উচ্চতর সপ্তকে উঠিয়া সযোস্তলোকের কাছে গিয়া মিলাইয়া গেল। সেদিন আর ঘোড়ায় চড়া হইল না এবং তাহার পরদিন হইতে সেই কৌতুকাবহ